সামিট গ্রুপ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং টেলিকম সেক্টরে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে আছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই প্রতিষ্ঠানটি এই গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে ব্যবসা শুরু করে। প্রতিযোগিতার অভাব এবং সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধার কারণে গত দেড় দশকে সামিট গ্রুপের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি লাভ করেছে।
একসময় জুতা এবং চিটাগুড় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত মুহাম্মদ আজিজ খান এখন সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি দেশের গন্ডি পেরিয়ে সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা। সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত। ফলে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করলেও এই কোম্পানির সম্পদের হিসাব হয় সিঙ্গাপুরে।
তবে সামিট গ্রুপ সবসময়ই দাবি করে যে তারা কোনো ধরনের সরকারি সুবিধা গ্রহণ করেনি এবং কেবলমাত্র নিজেদের যোগ্যতার বলেই ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করেছে।
১৯৭৩ সালে ব্যবসা শুরু করলেও ১৯৯৬ এবং ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতার কারণে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপক উল্লম্ফন হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। সামিটের কর্ণধার মুহাম্মদ আজিজ খানের এক ভাই অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফারুক খান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা এবং মন্ত্রী ছিলেন।
ছাত্রাবস্থায় ৩০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে জুতা, পিভিসি সামগ্রী এবং চিটাগুড়ের ব্যবসা দিয়ে যাত্রা শুরু করেন আজিজ খান। মাত্র এক বছরের মধ্যেই লাভের টাকা দিয়ে বাবার ঋণ পরিশোধ করেন তিনি।
বর্তমানে তিনি একজন স্বনামধন্য শিল্পপতি এবং সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। বিদ্যুৎ, জ্বালানি, টেলিকম, শিপিং, বন্দর, আবাসনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য বিস্তৃত করেছেন তিনি।
ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় ২,৫৮২তম স্থান অধিকার করেছেন সামিট গ্রুপের মালিক আজিজ খান। তার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। সিঙ্গাপুরের ৫০ জন শীর্ষ ধনীর তালিকাতেও ৪১তম স্থানে রয়েছেন তিনি। এভাবেই একজন সাধারণ ছাত্র থেকে আজ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন হয়ে উঠেছেন আজিজ খান।
২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরের বছর ১৯৯৭ সালে যাত্রা শুরু করে সামিট গ্রুপের সামিট পাওয়ার লিমিটেড। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সামিটের হাত ধরেই ওই বছর দেশে প্রথম বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। মাত্র চার বছরের মধ্যে ২০০১ সালে তিনটি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে সামিট, যার মোট উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৩৩ মেগাওয়াট। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ১০৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিক হয় প্রতিষ্ঠানটি।
২০০৯ সাল থেকেই সামিটের সঙ্গে একের পর এক নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে চুক্তি সই করতে থাকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তবে ২০১০ সালে বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে দায়মুক্তি দিয়ে বিশেষ বিধান পাস করার পর এ খাতে তাদের আধিপত্য আরও বাড়তে থাকে। বর্তমানে সামিট পাওয়ার এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ২,৫৩২ মেগাওয়াটের ১৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে।
অন্যদিকে দেশে প্রতিদিন বিদ্যুতের গড় উৎপাদন হয় প্রায় ১৩ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। অর্থাৎ দেশে যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় তার একটা বড় অংশই সামিট গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আসে। বিদ্যুৎ উৎপাদন না হলেও সামিটকে ক্যাপাসিটি চার্জ (কেন্দ্র ভাড়া) দিতে হচ্ছে সরকারকে। গত দেড় দশকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পেয়েছে তারা।
এসব প্রকল্প সামিটকে দেওয়া হয়েছে টেন্ডার ছাড়াই বিশেষ বিধানের আওতায়। এভাবে গত দেড় দশকে চাহিদা না থাকলেও একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে দিয়ে শত শত কোটি টাকার আয়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে সামিটসহ দলীয় ব্যবসায়ীদের। তাদের সরকারি জমি, কর ছাড়, প্রণোদনা দিয়ে জ্বালানি তেল আমদানিসহ নানা সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে সামিট।
গ্যাস সংকটের মধ্যেও সামিটের বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আবার দফায় দফায় তাদের মেয়াদ উত্তীর্ণ কেন্দ্রের মেয়াদও বাড়িয়েছে সরকার।
সামিট পাওয়ার: অভাবনীয় সম্পদ বৃদ্ধির জাদুকরী যাত্রা
সামিট পাওয়ারের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে উঠে এসেছে কোম্পানিটির অভূতপূর্ব সম্পদ বৃদ্ধির চিত্র। ২০০৩ সালে কোম্পানিটির মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০০ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আশ্চর্যজনকভাবে মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০০৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সামিট পাওয়ারের সম্পদ বৃদ্ধি আরও গতি পায়। ২০০৯ সালে কোম্পানিটির সম্পদের পরিমাণ ছিল ১,১২০ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর ঠিক এক বছর পর, ২০১০ সালে, তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় দেড়গুণ, অর্থাৎ ১,৪৫৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
এই ধারাবাহিক সম্পদ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকে এবং ২০২২ সালে এসে কোম্পানিটির মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০,৩০৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। একইসাথে কোম্পানিটি ৬৭৩ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন করে।
সামিট পাওয়ারের এই অসাধারণ সাফল্যের পেছনে কোম্পানির দক্ষ ব্যবস্থাপনা, সরকারের বিনিয়োগ-বান্ধব নীতি এবং দেশের বিদ্যুৎ খাতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
সামিট পাওয়ার: জামানত বাজেয়াপ্তির সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটলো পিডিবি
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে অনুমোদিত শান্তাহার ৫২ মেগাওয়াট এবং সৈয়দপুর ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আনতে ব্যর্থ হয় সামিট পাওয়ার। আইন অনুযায়ী, পিডিবি সামিটের ১২ লাখ ডলার জামানত বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু পিডিবি’র এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রভাবশালীদের চাপের মুখে রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানটি জামানত বাজেয়াপ্তির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।
এছাড়াও, সামিটের অনুরোধে পিডিবি তাদের সময় বাড়িয়ে দেয় এবং শান্তাহার ও সৈয়দপুরের পরিবর্তে নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জ ও বরিশালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সুপারিশ করে।
এই ঘটনায় পিডিবি’র নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা দেশের বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এলএনজিতে সামিট গ্রুপের একচেটিয়া ব্যবসা
দেশে গ্যাস অনুসন্ধানে অবহেলা করে কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে ২০১২ সালে এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা করে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ২০১৮ সাল থেকে দেশে শুরু হয় চড়ামূল্যের এলএনজি আমদানি।
আমদানিকৃত এলএনজি সংরক্ষণ এবং রিগ্যাসিফিকেশনের জন্য দরপত্র ছাড়াই দায়মুক্তি আইনে মহেশখালীতে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ)। এর একটি টার্মিনালের কাজ পায় সামিট।
চুক্তি অনুযায়ী, এফএসআরইউ অচল বা বন্ধ থাকলেও প্রতি মাসে সামিট গ্রুপকে ৪৫ লাখ ডলার (প্রায় ৯০ কোটি টাকা) ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে।
এলএনজি আমদানিতে সরকারকে প্রতি বছর গড়ে ২২ থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এই এলএনজি ব্যবসার বড় অংশ সামিট গ্রুপের দখলে।
এলএনজি খাতে দেশে সামিট গ্রুপের কার্যক্রম শুরু হয় মূলত ২০১৭ সালে। পেট্রোবাংলার সঙ্গে ওই বছরের এপ্রিল চুক্তি হয়। এরপর ২০১৯ সালে এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ১৫ বছরের কাজ পায় স্থানীয় জ্বালানি খাতের এ জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান। এই এলএনজি টার্মিনালটি ২০৩৩ সাল পর্যন্ত অপারেশনে থাকবে।
মহেশখালীতে আরও একটি এফএসআরইউ ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য গত মার্চে সামিটের সঙ্গে চুক্তি করে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার। এতে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা আয় হওয়ার কথা ছিল প্রতিষ্ঠানটির। প্রতিযোগিতা ছাড়াই দায়মুক্তি আইনে করা ওই চুক্তিটি গত সোমবার বাতিল করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সামিটকে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তটি মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে নেওয়া হয়েছিল বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
সামিটের একচেটিয়াত্বে টেলিকম খাত অস্থিতিশীল?
টেলিকম খাতে সামিট গ্রুপের একচেটিয়া আধিপত্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করা সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড গত দেড় দশকে টেলিকম ও ইন্টারনেট খাতের বৃহত্তম কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। টেলিকম খাতের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ লাইসেন্সের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করেছে সামিট গ্রুপ।
আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে শুরু করে সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সংযোগের প্রতিটি ধাপে লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে এ খাতে সামিটের একচেটিয়াত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই একচেটিয়াত্ব টেলিকম খাতকে অস্থিতিশীল করে তুলছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহের কাজ করে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান – ফাইবার এট হোম এবং সামিট টেলিকমিউনিকেশন। সামিটকে যখন ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) লাইসেন্স দেওয়া হয় তখন প্রতিষ্ঠানের এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। অথচ বর্তমানে তাদের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি। মূলত অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমেই টেলিকম খাতে তাদের ব্যবসা শুরু হয়। আঞ্চলিক ফাইবার অপটিকস কেবলের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতকে যুক্ত করেছে সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড।
এ ছাড়া দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে যোগাযোগের জন্য ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি), ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ, ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রেরিয়াল কেবলের (আইটিসি) লাইসেন্সও বাগিয়ে নিয়েছে সামিট।
দেশের টেলিকম খাতের টাওয়ার শেয়ারিং ব্যবসায়ও নাম লিখেছে সামিট টাওয়ার্স লিমিটেড। এ ছাড়া বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক স্থাপনের কাজ করেছে সামিট টেকনোলজিস লিমিটেড।
গত দেড় দশকে টেলিকম খাতে সামিটের মতো উত্থান আর কোনো প্রতিষ্ঠানের হয়নি। এটিই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যাদের ইন্টারনেটের সব ধরনের লাইসেন্স রয়েছে। তাদের অনেকটা একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে দেশীয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
টেলিকম খাতে নানা সুবিধা নেওয়ার পর বাকি ছিল সাবমেরিন কেবল স্থাপনের কাজ। সেটিও গত বছর বাগিয়ে নিয়েছে সামিট গ্রুপ।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একমাত্র লাভজনক সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস পিএলএসি (বিএসসিপিএলসি)। সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে দেশে প্রথম ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সরবরাহ শুরু করে এই প্রতিষ্ঠানটি।
বর্তমানে দেশে মোট ব্যান্ডউইথের চাহিদা ৬,২০০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড)। বিএসসিপিএলসির দুটি সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে প্রায় ৭,২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা সম্ভব।
এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে তৃতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপনের কাজ করছে। হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে তৃতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপন শেষে ২০২৫ সাল নাগাদ বিএসসিপিএলসির মোট ব্যান্ডউইথ ক্ষমতা দাঁড়াবে ২০,৪২০ জিবিপিএস-এর বেশি। এই পরিমাণ বর্তমান চাহিদার তিনগুণেরও বেশি।
চাহিদার অতিরিক্ত পরিমাণ ব্যান্ডউইথের সরবরাহ থাকার পরও রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০২২ সালে সামিটসহ তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে প্রথমবারের মতো বেসরকারি পর্যায়ে দেওয়া হয় সাবমেরিন কেবলের লাইসেন্স।
সাবমেরিন কেবলের পরিবর্তে আইটিসি: সামিট গ্রুপের একচেটিয়া ব্যবসার কৌশল?
সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যান্ডউইথ সরবরাহের জন্য নতুন সাবমেরিন কেবল স্থাপনে তিনটি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পেলেও মূল বিনিয়োগ করবে সামিট। বাকি দুটি প্রতিষ্ঠান ডামি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এটি সামিটের একচেটিয়া ব্যবসা কৌশল বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ অভিজ্ঞসম্পন্ন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আবেদন নাকচ করে সামিটকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে সাবমেরিন কেবল এবং আইটিসি – এই দুই মাধ্যমে বাংলাদেশ বহির্বিশ্বের সাথে ইন্টারনেটে সংযুক্ত।
ব্যাকআপ হিসেবে চালু হওয়া আইটিসি ই বর্তমানে দেশের ব্যান্ডউইথ সরবরাহের প্রধান মাধ্যম। আর এর পেছনেও রয়েছে সামিট।
বিএসসিপিএলসির ৭,২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহের ক্ষমতা থাকলেও ব্যবহার হচ্ছে মাত্র ২,৯০০ জিবিপিএস। অন্যদিকে আইটিসি অপারেটরগুলো সরবরাহ করছে ৩,৩০০ জিবিপিএস, যার মধ্যে ২,৫০০ জিবিপিএস এসেছে সামিটের মাধ্যমে। অর্থাৎ মোট চাহিদার ৪৬ ভাগ সরবরাহ করছে বিএসসিপিএলসি এবং বাকি ৫৪ শতাংশ আসছে আইটিসি থেকে, যার বেশিরভাগই আমদানি করছে সামিট।
ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতার ৬০ শতাংশ ব্যান্ডউইথ অব্যবহৃত থাকায় সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। তৃতীয় সাবমেরিন কেবল চালু হলে এই ক্ষতি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।