ডেমোক্র্যাটদের হারিয়ে, নির্বাচন পূর্ববর্তী জনমত জরিপের প্রতিটি ধাক্কা উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৮ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো বিরতিতে ক্ষমতায় ফিরলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই বিজয় শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একটি অসাধারণ ঘটনা নয়, বরং বিশ্বরাজনীতির জন্যও এক অনন্য তাৎপর্য বহন করে। নির্বাচনের আগের জরিপগুলোতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমালা হ্যারিস এগিয়ে ছিলেন বলে ধারণা করা হলেও, মঙ্গলবারের ভোটে রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্পকে আবার হোয়াইট হাউসের দায়িত্বে ফিরে আসতে দেখা গেল।
নির্বাচনী ফলাফল বলছে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে প্রয়োজনীয় ২৭০টি ভোট নিশ্চিত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে নির্ধারণী রাজ্য উইসকনসিনের ১০টি ইলেক্টোরাল ভোট লাভের পরই তার জয় নিশ্চিত হয়। এ পর্যন্ত ২৭৯টি ইলেক্টোরাল ভোট সংগ্রহ করে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী কমালা হ্যারিসকে পেছনে ফেলেছেন, যিনি পেয়েছেন ২২৩টি ভোট।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও যুক্তরাষ্ট্রের এডিসন রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের এই প্রত্যাবর্তন তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন করেছে। ২০২০ সালের পরাজয় এবং ক্যাপিটল হিলে হাঙ্গামার ঘটনা তাকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল। কিন্তু এইসব বাধা অতিক্রম করে তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা, বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান চাপ একটি বড় ভূমিকা রেখেছে।
“আমেরিকা ফার্স্ট” নীতিতে অবিচল ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারে অর্থনৈতিক সংকট এবং অবৈধ অভিবাসনের ইস্যু তুলে ধরে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমালার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক প্রচারণা চালান। তিনি মার্কিনিদের কাছে এই বার্তা পৌঁছাতে সক্ষম হন যে তার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র মুদ্রাস্ফীতির চাপে থেমে থাকবে না বরং আরও শক্তিশালী হবে।
অন্যদিকে কমালা হ্যারিস, যিনি ভারতীয় অভিবাসী পরিবারের সন্তান, অভিবাসন নীতিতে আরও উদারতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প সমর্থকদের কাছে এই বার্তা প্রভাব ফেলেনি। তাদের কাছে কমালা হ্যারিসের উদার নীতিকে ‘অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন’ বলে আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচার চালান এবং ভোটারদের আস্থা অর্জন করেন।
নির্বাচনের পরদিন সকালে কমালা হ্যারিস সমর্থকদের নিয়ে হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ইলেকশন নাইট পার্টিতে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও, ফলাফল আসতে শুরু করলে তিনি সেখানে উপস্থিত হননি। তার পরিবর্তে তার প্রচার শিবিরের কো-চেয়ারম্যান সেড্রিক রিচমন্ড মাঝরাতে সমর্থকদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন এবং জানান, কমালা পরে জনসম্মুখে কথা বলবেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে, যেখানে সামনের দিনে দেশটির গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে পুনঃপরীক্ষার মুখে পড়তে হতে পারে।