বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রচ্ছদসারাদেশসংরক্ষিত বনে টমটম চার্জিং স্টেশন ও মুরগির ফার্ম!

সংরক্ষিত বনে টমটম চার্জিং স্টেশন ও মুরগির ফার্ম!

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের সংরক্ষিত বনের ভেতর গাছপালা ও পাহাড়ি টিলা সাবাড় করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে টমটমসহ ব্যাটারি চালিত রিকশার চার্জিং স্টেশন। এমনকি বিশালায়তনের বনভূমি দখলে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে মুরগির ফার্মও।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ইসলাম নগর এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, সংরক্ষিত বনের ভেতর যাতায়াতের সুবিধার্থে পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। খোদ বনবিভাগের কার্যালয়ের অদূরে অবৈধভাবে জবর-দখলের পর সেখানে স্থাপন করা চার্জিং স্টেশন ও মুরগির ফার্মে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগও।

অভিযোগ উঠেছে, কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইলিয়াছ সাঈদীর নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট সংরক্ষিত বনের জমি জবর-দখল করে প্লট আকারে বিক্রি করে আসছে। ইলিয়াছ সাঈদী কৈয়ারবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করে ইলিয়াছ সাঈদী ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ দখল করেন। এরপর থেকে তিনি কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের নলবিলা বনবিটের সংরক্ষিত বনভূমিতে রাজত্ব কায়েম করতে থাকেন।

গত ১০ বছরে ইলিয়াছ সাঈদী সংরক্ষিত বনভূমি জবর-দখল করে উঁচু-নিচু টিলা শ্রেণির পাহাড় সাবাড় করে বসবাস উপযোগী করে প্লট আকারে বিক্রি করেছেন। এরপর অবৈধভাবে সেখানে গড়ে তোলা হয় শত শত বসতি। একইভাবে ইলিয়াছ সাঈদীর নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট মোটা অংকের টাকায় সংরক্ষিত বনভূমি বিক্রি করে যেখানে ইজিবাইক (টমটম) চার্জিং স্টেশন, মুরগির ফার্ম গড়ে তোলা হয়েছে।

সংরক্ষিত বনের ভেতর স্থাপন করা টমটম চার্জিং স্টেশনের কর্মচারীরা জানান, ইলিয়াছ সাঈদীর কাছ থেকে জায়গা কেনার পর এই চার্জিং স্টেশনটি স্থাপন করেন বাদশা মিয়া। বর্তমানে তিনি প্রবাসে থাকায় তার স্ত্রী রুনা আক্তার এটি পরিচালনা করছেন। চার্জিং স্টেশন ঘেঁষে বিশালায়তনের যে মুরগির ফার্মটি স্থাপন করা হয়েছে তার মালিক মুবিনুল ইসলাম।

সরেজমিনে দেখা যায়, ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের নিয়ন্ত্রণাধীন নলবিলা বনবিটের কাছে এই সংরক্ষিত বনের ভেতর গগণচুম্বী শতবর্ষী মাদার ট্রি (গর্জন) দাঁড়িয়ে আছে। অবৈধ বসতি স্থাপনের কারণে মাদার ট্রিগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। অনেক স্থানে গাছের গোড়ালির ছাল তুলে এক ধরনের ওষুধ (তুঁত) ব্যবহার করে গাছ মেরে ফেলা হচ্ছে।

সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে প্লট আকারে বিক্রি করার অভিযোগ অস্বীকার করে ইলিয়াছ সাঈদী বলেন, এটি তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার।

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মেহরাজ উদ্দিন বলেন, সংরক্ষিত বনের ভেতর কেউ অবৈধ বসতি বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হবে। নলবিলা বনবিট কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সংরক্ষিত বনের জমিতে স্থাপিত ইজিবাইক চার্জিং স্টেশন ও মুরগির ফার্মে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চকরিয়া জোনাল কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সাদিকুল ইসলাম বলেন, হয়তো ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছে। বনবিভাগ যদি সহযোগিতা চায় তাহলে সংরক্ষিত বনের ভেতর অবৈধ স্থাপনায় দেওয়া বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই বিভাগের আরও পড়ুন