রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রচ্ছদটপ নিউজজীবন রক্ষাকারী ওষুধের ঊর্ধ্বগতি: নিত্যপণ্যের পর এবার ওষুধে কাটছাঁট

জীবন রক্ষাকারী ওষুধের ঊর্ধ্বগতি: নিত্যপণ্যের পর এবার ওষুধে কাটছাঁট

নিজস্ব প্রতিবেদক

জীবন রক্ষাকারী অর্ধশতাধিক ওষুধের দামে আবারও ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। গত তিন মাসে কোনো কোনো ওষুধের দাম ১১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিয়মের তোয়াক্কা করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিত্যপণ্য কিনতে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষ এ ধাক্কা সামলাতে খাদ্যপণ্যে কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছেন। দীর্ঘমেয়াদে পরিবারের সদস্য, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের মধ্যে পুষ্টি ঘাটতি দেখা দিতে পারে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তকে ওষুধের বাড়তি দাম চুকাতে হবে প্রাণের মূল্যে!

যদিও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, জ্বালানি তেল ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কিছু ওষুধের দাম সমন্বয় করা হয়েছে।

জানা যায়, অত্যাবশ্যকীয় ১১৭টি ওষুধের দাম নির্ধারণ করে সরকার। এর বাইরে বাজারে থাকা বেশিরভাগ ওষুধ উৎপাদক কোম্পানির ঠিক করা দামে বিক্রি হয়। তবে এর জন্যও কিছু নিয়ম মানতে হয় কোম্পানিগুলোকে। নতুন দরের যুক্তিসহ অনুমোদনের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করতে হয়। সরকার আমদানি কাঁচামালের উৎস, দর, মানসহ বিভিন্ন বিষয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে যাচাই শেষে সমন্বয় করে।

কিন্তু ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও এ নিয়ম মানেনি কোম্পানিগুলো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাজারে দাম কার্যকর করে তা অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বড় বড় উৎপাদক প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই সরকারকে চাপে রাখে। যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের সক্ষমতা না থাকায় অধিদপ্তরও মেনে নিতে বাধ্য হয়।

গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসিতে অন্তত ৫০টি ওষুধ বাড়তি দামে বিক্রি হতে দেখা যায়। এসব ওষুধের মধ্যে আটটির দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ১১টি, ১০ থেকে ৩০ শতাংশ ২২টি এবং ৯টি ওষুধের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১১০ শতাংশ।

বৃদ্ধির তালিকায় থাকা ২১টি ওষুধ স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের। এ ছাড়া এসিআই, এরিস্ট্রো ফার্মা, সার্ভিয়ার ফার্মা, ইউনিমেড ইউনিহেলথ, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল, বীকন ফার্মা ও নুভিস্তা ফার্মার বিভিন্ন ওষুধের দাম বেড়েছে।

বৃদ্ধির তালিকায় যেমন শিশুর সর্দি-কাশির সিরাপ রয়েছে; তেমনি রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক, ভিটামিন, ব্যথা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ওষুধ।

ওষুধের দাম বৃদ্ধির কয়েকটি উদাহরণ হলো: অনিয়ন্ত্রিত-২ ডায়াবেটিস রোগীর ব্যবহৃত এমজার্ড এম ট্যাবলেট ৫/৫০০ মিলিগ্রামের প্যাকেট ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৪০ টাকা হয়েছে। ডাইমাইক্রন এম ৩০ মিগ্রা ৩৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৪২০ টাকা হয়েছে। এমপামেট ৫ মিগ্রা+৫০০ ট্যাবলেট ১০০ টাকা বেড়ে ৬০০ টাকা হয়েছে। এরিস্ট্রো ফার্মার প্লুভান প্লাস ৫০ মিগ্রা ২২০ টাকা বেড়ে ৭২০ টাকা হয়েছে। ১০ টাকার অ্যানাফ্লেক্স ম্যাক্স এখন ২১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২০ টাকার ভায়োডিন মাউথওয়াশ এখন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, এমনিতেই হতদরিদ্র, নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার বাইরে। এখন ওষুধের দাম মাত্রাতিরিক্ত বাড়ায় দেখা দেবে চিকিৎসা বৈষম্য।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক আকতার হোসেন বলেন, আমরাও অভিযোগ পাচ্ছি। ভোক্তা থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে দাম পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া বাজার তদারকির জন্য সারাদেশে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এই বিভাগের আরও পড়ুন