রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রচ্ছদশিক্ষাকারিগরি শিক্ষায় অগ্রগতি নেই: লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও অর্জিত হয়নি এক...

কারিগরি শিক্ষায় অগ্রগতি নেই: লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও অর্জিত হয়নি এক যুগে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিপুল জনশক্তিকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে কারিগরি শিক্ষায় সরকার বিশেষ জোর দিলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন হয়নি। শিক্ষক সংকট, উপকরণের অভাব, অনুন্নত কারিকুলামসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা।

২০১২ সালে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল, ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষার্থীর হার ২০ শতাংশ হবে। কিন্তু ২০২৪ সালে এসেও এই হার ১৬ শতাংশ বলে দাবি করা হলেও, আন্তর্জাতিক কারিগরি শিক্ষার সংজ্ঞা অনুযায়ী এটি মূলত ৯ শতাংশ। অর্থাৎ এক যুগেও লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও অর্জিত হয়নি।

বিভিন্ন পলিটেকনিক, মনোটেকনিক এবং কারিগরি স্কুল ও কলেজে শিক্ষক পদের ৭০ শতাংশই শূন্য। জনশক্তি ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যুরোর অধীন কারিগরি প্রতিষ্ঠানেও প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষক পদ শূন্য। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে এক শিফটের শিক্ষক দিয়ে চালানো হচ্ছে দুই শিফট। অনেক প্রতিষ্ঠানে ল্যাবরেটরি সংকট, আবার ল্যাব থাকলেও নেই যন্ত্রপাতি।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা আরো নাজুক। ৩৮৭টি বেসরকারি পলিটেকনিকের মধ্যে মাত্র ২০ থেকে ২৫টি ছাড়া অন্যগুলো নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। মালিকরা সার্টিফিকেট বিক্রির দোকান খুলে বসেছেন।

শিক্ষায় অনুন্নত কারিকুলাম ও পুরোনো কোর্স থাকায় পড়ালেখা সম্পন্ন করেও চাকরির বাজারে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকে। কারিগরি বিভিন্ন বিষয়ে বিদেশে চাহিদা থাকলেও শিক্ষার মান উন্নয়নে আশাতীত কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্টদের।

বেকারত্ব দূরীকরণে উন্নত দেশের আদলে দেশের কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দুই জন শিক্ষক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। দেশে এখন প্রতি তিন জন বেকারের মধ্য এক জন উচ্চশিক্ষিত। গত পাঁচ বছরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ৪ লাখ থেকে ৮ লাখে উন্নীত হয়েছে। এর মূলে রয়েছে কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব না দেওয়া।

জাপান ও জার্মানির উন্নতির প্রধান সোপান হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা। কারিগরি শিক্ষার হার জাপানে ৭৩ শতাংশ ও জার্মানিতে ৭১ শতাংশ। শিক্ষার কারিকুলামও আধুনিক তথা চাহিদা মাফিক এবং মান খুবই উন্নত। পার্শ্ববর্তী দেশ মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, চীন, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নয়নের মূলেও কারিগরি শিক্ষা।

সিপিডির (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন জেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মাত্র ১৩ শতাংশ শিক্ষার মানে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। সাবেক শিক্ষার্থীদের ৬৩ শতাংশের মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকার নিচে।

কারিগরি শিক্ষায় দিনদিন মেয়েদের সংখ্যা কমছে। কারিগরি শিক্ষার হার কম হওয়ায় দেশ একদিক দিয়ে বেকারত্বের রেকর্ড ভঙ্গ করছে, অন্যদিক দিয়ে দক্ষতা ঘাটতি বেড়েই চলেছে। ফলে সার্বিক উন্নতি চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

বর্তমানে কারিগরিতে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোর কোনো উপযোগিতা নেই। যেমন ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ‘ডিপ্লোমা ইন মাইনিং’। এটি মূলত খনিজসম্পদ বিষয়ক একটি কোর্স। কিন্তু দেশে খনিজসম্পদ বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এই বিষয়টি চায় না। ফলে একটি স্বতন্ত্র ডিপ্লোমা কোর্স হিসেবে এর চাহিদা শূন্য।

কারিগরিতে শিক্ষার্থী না বাড়ার অন্যতম কারণ হলো, সাধারণ শিক্ষা থেকে এসএসসি পাশ করেও কারিগরিতে যাওয়া যায়। সাধারণ শিক্ষায় উচ্চ মাধ্যমিক কোর্স দুই বছরের। কারিগরিতে ডিপ্লোমা কোর্স চার বছরের হলেও তার মান উচ্চ মাধ্যমিকের সমান। এছাড়া কারিগরি থেকে ডিপ্লোমা করে সরকারিভাবে উচ্চশিক্ষার সুযোগ কম।

এ ব্যাপারে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আজিজ তাহের খানের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে অধিদপ্তরে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘শর্ট কোর্স এবং বিজনেস ম্যানেজমেন্ট (বিএম) কলেজ—দুটিই কারিগরি শিক্ষা।’ তিনি দাবি করেন, বর্তমানে কারিগরিতে শিক্ষার্থীর হার ১৬.০৪ শতাংশ।

এই বিভাগের আরও পড়ুন