একসময় পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঁশ দিয়ে কাগজ তৈরি করে সারাদেশে সরবরাহ করতো কর্ণফুলী পেপার মিলস (কেপিএম)। কিন্তু এই কাগজকলটিতে এখন আর বাঁশ দিয়ে কাগজ তৈরি হয় না। বেসরকারি শিল্প গ্রুপের বাজার দখলের ফলে কেপিএমের কাগজের কদর অনেকটাই কমে গেছে।
তবে স্থানীয়ভাবে পাহাড়ের বাঁশের কারবার এখনো জমজমাট। কেপিএম বন্ধ হয়ে গেলেও দেশজুড়ে এই বাঁশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-জঙ্গলে উৎপাদিত বাঁশ এখনো বাজারজাত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
সম্প্রতি রাঙামাটি সদর উপজেলার কুতুকছড়ি বাজারে দেখা গেছে, খালের মধ্যে পানিতে ভাসিয়ে শ্রমিকরা বাঁশের চালা আনছেন। কেউ কেউ সেই বাঁশ বেঁধে প্রক্রিয়াজাত করছেন। আবার কেউ কেউ বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে কাঁধে করে এনে ট্রাকে ভর্তি করছেন।
রাঙামাটির কাউখালী, কাপ্তাই, নানিয়ারচর উপজেলা ও জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঁশ বাজারজাত করা হয়। এই বাঁশ ফরিদপুর, ঢাকার সাভার, সরাইল, কুমিল্লার দাউদকান্দি, ভৈরব, নোয়াখালী, টেকনাফ, শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়।
বাঁশ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঁশের চাহিদা থাকলেও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না তারা। অন্যদিকে বন বিভাগ আগের চেয়ে বাঁশে শুল্কহার বাড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
এই খরচ বৃদ্ধির কারণে স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে বাজারমূল্য অনুযায়ী অনেকটা কম দামেই বাঁশ কিনতে হচ্ছে তাদের। এতে করে কমছে বাঁশের বাজারজাতও।
২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে শুল্কহার বাড়ার কারণে বেড়েছে পরিবহন খরচসহ সংশ্লিষ্ট খাতের খরচ। এতে করে বাঁশ ব্যবসায় লাভ কমে আসছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও উপবন সংরক্ষক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, সারা দেশেই পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঁশের চাহিদা রয়েছে।
তিনি বলেন, “এখন তো কক্সবাজারের টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রচুর বাঁশ যায় রাঙামাটি থেকে। বাঁশ ব্যবসার ক্ষেত্রে আমরা আপাতত কোনো ত্রুটি-জটিলতা দেখছি না। তবে শুল্কহার যেটা বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে সেটা অনেক আগের শুল্কহার। সেজন্য এটা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে, দেশের জন্যও তো কিছু রাজস্ব দরকার।”
পার্বত্য চট্টগ্রামের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে বাজালি, ছোটিয়া, মুলি, টেংরা মুলি, ওরাহ, মিতিঙ্গা, ডলু, নলি, বাড়িওয়ালা, ছাতারবাটা ও কালিছড়ি জাতের বাঁশ উৎপাদিত হয়।
রাঙামাটি, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল, নাড়াইছড়ি, মাচালং, পশ্চিম লক্ষীছড়ি, পূর্ব লক্ষীছড়ি, বাঘাইহাট, শিজক পাবলাখালী গেইম সেঞ্চুয়ারিসহ বিভিন্ন এলাকায় বাঁশ উৎপাদন, আহরণ ও বাজারজাতকরণ করা হয়।