কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) চলতি অর্থবছরে ১ কোটি ৭৮ লাখ টন আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও, ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। দেশজুড়ে সংগ্রহ অভিযান শুরুর এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় খুবই সামান্য পরিমাণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।
গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি তিন টাকা বাড়িয়ে ১০ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও, অনেক জেলায় কার্যত কোনো সংগ্রহই হয়নি। গত সোমবার পর্যন্ত মাত্র ৪ হাজার ৭১২ টন ধান, ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫২ টন সেদ্ধ চাল এবং ২১ হাজার ৫২৪ টন আতপ চাল সংগ্রহ করা গেছে।
কৃষক ও মিল মালিক উভয় পক্ষই সরকারি দরের চেয়ে বাজারে বেশি দাম পাওয়ায় সরকারি গুদামে ধান-চাল সরবরাহে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। মিল মালিকরা লোকসানের অজুহাত দেখাচ্ছেন, অন্যদিকে কৃষকরাও বেশি দামে বাইরে বিক্রি করতে পারছেন। এই পরিস্থিতিতে সংগ্রহ অভিযান বাস্তবায়ন নিয়ে গভীর শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
চাষি ও মিলারদের অভিযোগ, প্রতি বছর কারসাজি, জটিল প্রক্রিয়া এবং বাজারের চেয়ে কম দামের কারণে এই অভিযান ব্যর্থ হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ মজুত না বাড়ালে আপৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১০ হাজার ২৮১টি চালকলের মধ্যে মাত্র ৭ হাজার ৭৫৬টি সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে। চুক্তি না করা মিলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)-এর গবেষণা বলছে, কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে পাঁচবার হাত বদল হয় এবং চালকল মালিকরা সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেন।
মাঠ পর্যায়ের চিত্র আরও হতাশাজনক। কুষ্টিয়ায় এক ছটাক ধানও সংগ্রহ হয়নি। মিল মালিকরা বলছেন, বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় তাদের লোকসান হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঝিনাইদহ, রংপুর, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট ও বগুড়াতেও একই চিত্র। কৃষকরা বলছেন, সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে নানা জটিলতা ও হয়রানি রয়েছে।
নোয়াখালীর কৃষক দুলাল চন্দ্র দাস জানান, উৎপাদন খরচ বেশি হলেও সরকার কম দাম নির্ধারণ করেছে এবং অ্যাপসের মাধ্যমে ধান বিক্রিতেও ঝামেলা রয়েছে। ইফপ্রি-এর গবেষণা অনুযায়ী, দেশের ৪৭ শতাংশ ধান উৎপাদন করেন ক্ষুদ্র চাষিরা, যারা দাম কম হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান, কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং চুক্তি না করা মিল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খাদ্য উপদেষ্টা জানান, সরকার নির্ধারিত মূল্যে লোকসানের কোনো সুযোগ নেই এবং আগামী মৌসুমে দাম সমন্বয় করা হবে।
সব মিলিয়ে, ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে সরকারের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক এবং লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে।