এক সময়ের সবুজ অরণ্যে ঘেরা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা এখন বৃক্ষশূন্য। মাইনী নদী অববাহিকায় ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড় ও টিলা সমৃদ্ধ এই জনপদ অরণ্য হারিয়ে বিরান ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, বন বিভাগের উদাসীনতার সুযোগে একটি চক্র প্রতিনিয়ত সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করছে।
স্থানীয়দের শঙ্কা, চলতি মৌসুমে দীঘিনালার বিভিন্ন পাহাড়ি বন থেকে অন্তত ৫ লাখ ঘনফুট কাঠ উজাড় হতে পারে। প্রতিদিন প্রকাশ্যে বেআইনিভাবে চাঁদের গাড়ি (জিপ) করে বিভিন্ন বাণিজ্যিক কাজে পরিবহন করা হচ্ছে বনের কাঠ। শুষ্ক মৌসুমে, অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত এভাবেই চলবে কাঠ পাচার।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ এবং ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের চারটি রেঞ্জ রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতায় নাড়াইছড়ি রেঞ্জ, ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের আওতায় হাজাছড়ি রেঞ্জ, লংগদু উল্টাছড়ি রেঞ্জ এবং মেরুং রেঞ্জের কাঠ পাচার রোধে রয়েছে জামতলী চেক স্টেশন। তবুও, জামতলী চেক স্টেশনের সামনে দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য জ্বালানি কাঠ বোঝাই জিপ চলাচল করে।
সরেজমিনে উপজেলার হাজাপাড়া, নয়মাইল, সীমানাপাড়া, মায়াফাপাড়াসহ বিভিন্ন পাড়ায় দেখা গেছে, উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরের গ্রাম বিষ্ণুকার্বারী পাড়া এবং তার থেকে আরো ৫ কিলোমিটার দূরে গভীর দুর্গম পাহাড়ও উজাড় হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা গণেশ ত্রিপুরা, কার্তিক ও হতেন্দ্র ত্রিপুরার অভিযোগ, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা ছোট-বড় সব ধরনের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে শ্রমিকেরা। এতে পুরো পাহাড়টি বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিকেরা জানান, তারা দৈনিক শ্রমিক হিসেবে গাছ কাটার কাজ করেন। তৃতীয় একটি পক্ষ পাহাড়ের মালিক থেকে চুক্তির ভিত্তিতে সব গাছ কিনে নেয় এবং বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে।
কাঠ পাচারের প্রধান রুট খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের জামতলী এলাকা। অথচ জামতলীতেই পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন নাড়াই রেঞ্জ এবং ঝুম নিয়ন্ত্রণ বিভাগের চেক পোস্টও রয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলার থানা বাজার হয়ে বোয়ালখালী বাজার সড়ক হয়ে ইটভাটায় কাঠ পরিবহন করা হচ্ছে।
জামতলী চেক স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা মো. শাহীন মিয়া দাবি করেন, “আমি এখানে একমাস আগে যোগদান করেছি। আমরা আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছি। যোগদানের পর একটি গাড়ি আটক করেছি এবং মামলাও হয়েছে।”
পরিবেশকর্মীরা বনের গাছ কর্তন রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ রাসেল বলেন, “অনুমতি ছাড়া প্রাকৃতিক বনের গাছ কাটার কোন নিয়ম নেই। কিন্তু খাগড়াছড়িতে নির্বিচারে বন কর্তন হচ্ছে। বন বিভাগ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।”
বন বিভাগের নাড়াইছড়ি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, “চলতি মৌসুমে আমরা দুইটা গাড়ি জব্দ করেছি।” তবে কাঠ পাচার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।
এ বিষয়ে ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. জাহিদুর রহমান মিয়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।