যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৫ নভেম্বর জয়লাভ করে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণার প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগী হচ্ছেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি এবং অভিবাসন নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার পর এবারও তিনি কয়েকটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত। তবে এসব উদ্যোগের কিছু বাস্তবায়ন করতে হলে কংগ্রেসের সমর্থন প্রয়োজন হবে, যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতি
নির্বাচনী প্রচারণাকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অভিবাসী প্রত্যাবাসন অভিযান পরিচালনা করবেন। তার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বিশাল ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি, সীমান্তরক্ষীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অপরাধী অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।
অভিবাসীদের ব্যাপক গণপ্রত্যাবাসনের অংশ হিসেবে, সন্দেহভাজন ড্রাগ কার্টেল ও অপরাধী গ্যাং সদস্যদের আদালতের শুনানি ছাড়াই বের করে দেয়ার জন্য ১৭৯৮ সালের ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’ প্রয়োগ করারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এসব নীতির মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন প্রক্রিয়াকে আরও কঠোর এবং নিয়ন্ত্রিত করতে চান।
এছাড়া, তিনি অভিবাসন আদালতে শুনানির অপেক্ষায় থাকা অভিবাসীদের স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুযোগ বা তার ভাষায় ‘ক্যাচ-অ্যান্ড-রিলিজ’ নীতি বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছেন। এ নীতির আওতায় অভিবাসীদের মুক্তি দেয়া হত, তবে ট্রাম্পের মতে এটি স্থানীয় সমাজে ঝুঁকি তৈরি করে। তিনি তার প্রথম মেয়াদে চালু করা ‘রিমেইন ইন মেক্সিকো’ নীতি পুনর্বহাল করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন, যাতে অভিবাসীরা মামলা চলাকালে মেক্সিকোতে অপেক্ষা করতে বাধ্য থাকবেন।
শুল্ক নীতি ও স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার
ট্রাম্পের আরেকটি উল্লেখযোগ্য পরিকল্পনা হলো আমদানির ওপর শুল্ক বৃদ্ধি। তার নতুন নীতি অনুযায়ী, আমদানিকৃত সকল পণ্যের ওপর ১০ থেকে ২০ শতাংশ এবং বিশেষ করে চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
তার শিবির থেকে বলা হয়েছে, তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ার অ্যাক্ট (আইইইপিএ) ব্যবহারের মাধ্যমে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারেন, যা তাকে জরুরি অবস্থায় অর্থনৈতিক লেনদেন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেয়। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নের পথে আইনি চ্যালেঞ্জ আসতে পারে এবং কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়া এটি বাস্তবায়ন সহজ হবে না।
অর্থনৈতিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে তিনি ফেডারেল স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর পুনর্গঠন এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারিরও ঘোষণা দিয়েছেন। ইলোন মাস্কের মতো তার সমর্থকরা বলছেন, ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সিতে তাদের নিয়োগ দেয়া হলে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজেট কাটছাঁট করা সম্ভব হবে।
শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তনের ঘোষণা
শিক্ষাক্ষেত্রে আদর্শগত পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থায় এখন আদর্শগত পুনর্গঠনের প্রয়োজন। তার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ এবং দেশপ্রেমের উপর গুরুত্ব দেয়া। তার এই উদ্যোগও কংগ্রেসের সমর্থনের প্রয়োজন হতে পারে, তবে তিনি কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেন সংকটে ট্রাম্পের অবস্থান
ট্রাম্প আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউক্রেন সংকটে দ্রুত সমাধানের পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গাজা যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করবেন। একইভাবে, ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত সমাপ্ত করার প্রতিও তিনি জোর দিয়েছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই অবস্থান বাইডেন প্রশাসনের তুলনায় বেশ ভিন্ন এবং এ কারণে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হতে পারে।
অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দ্রুত পদক্ষেপের পরিকল্পনা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠরা আশা করছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি আরও দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে তার লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারবেন। প্রথম মেয়াদে বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। এবার তিনি প্রশাসনের কাঠামোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে সেই জটিলতাগুলো এড়াতে চান।
এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের পথে তিনি আরও একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারেন, তবে তার সমর্থকরা বিশ্বাস করেন, আগের অভিজ্ঞতার আলোকে এবার তিনি আরও সফল হবেন।