বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
প্রচ্ছদঅর্থ-বাণিজ্যঅবাস্তবায়নযোগ্য উচ্চাভিলাষ পরিহার, ছোট আকারের এডিপি’র পথে সরকার

অবাস্তবায়নযোগ্য উচ্চাভিলাষ পরিহার, ছোট আকারের এডিপি’র পথে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকার আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য তুলনামূলকভাবে ছোট আকারের একটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে এর আকার ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি থেকে মাত্র ৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। এর আগে কখনও দুই অর্থবছরের এডিপির আকারে এত কম ব্যবধান দেখা যায়নি। অর্থ বিভাগ সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

অন্যদিকে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি’র বেশিরভাগ অর্থ খরচ করা সম্ভব না হওয়ায়, এর আকার ৪৯ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা, যা মূল এডিপি থেকে ১৮ শতাংশ কম—একটি রেকর্ড।

অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, পূর্বের রাজনৈতিক সরকার কর্তৃক গৃহীত ‘ঢাউস’ আকৃতির এডিপিতে অনেক রাজনৈতিক প্রকল্প ছিল, যা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার স্থগিত করেছে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন এই মুহূর্তে যৌক্তিক নয়। এর ফলে এডিপি বাস্তবায়ন হারও কমে গেছে।

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ, যেখানে এই সময়ে ৮৮ হাজার ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ের বিপরীতে মাত্র ২৩ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এই কারণে, সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য কোনো অবাস্তবায়নযোগ্য উচ্চাভিলাষী এডিপি প্রণয়ন না করার নির্দেশনা দিয়েছে।

২০১৫-১৬ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত এডিপি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মূল এডিপি তো বটেই, সংশোধিত এডিপিও সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সর্বোচ্চ ৯৫ ভাগ সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে। অর্থ বিভাগের ‘অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২২’ অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি (৯৫ শতাংশ) এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল, যেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সবচেয়ে কম (৮০ শতাংশ) বাস্তবায়ন হয়েছিল।

এডিপি বাস্তবায়নের হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ ২০১৮ সালে বাজেট মনিটরিং কমিটির সভায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ পেশ করেছিল। এই সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অনুমোদিত ব্যয়ের সীমার মধ্যে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন নিশ্চিত করা। অর্থাৎ, যে প্রকল্পগুলোকে সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়, সেগুলোর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ যেন কোনোভাবেই কম না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়াও, যদি নতুন কোনো অগ্রাধিকার প্রকল্পের জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়, এবং সেই মুহূর্তে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকে, তাহলে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ কমিয়ে অথবা স্থগিত করে সেই অর্থ নতুন অগ্রাধিকার প্রকল্পে স্থানান্তরের সুপারিশ করা হয়।

বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রেও বিশেষ নজরদারির কথা বলা হয়েছে, যাতে বিদেশি সহায়তার অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলে। দক্ষ প্রকল্প পরিচালকের অভাব একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায়, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে চুক্তিভিত্তিক প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়, যাতে তাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে লাগানো যায়।

সবশেষে, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক বড় প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের উপর জোর দেওয়া হয়েছে, কারণ এই প্রকল্পগুলো দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই সুপারিশগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে এডিপি বাস্তবায়নের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো সম্ভব।

তবে, এই সুপারিশগুলো এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন লক্ষ্য অনুযায়ী হচ্ছে না। সরকার এখন বাস্তবসম্মত এবং বাস্তবায়নযোগ্য এডিপি প্রণয়নের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।

এই বিভাগের আরও পড়ুন