নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর এক মাস পেরিয়ে গেলেও, চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা এখনো পায়নি সব বই। কেউ পেয়েছে তিনটি, কেউবা দুটি। প্রাথমিকের বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা এক থেকে তিনটি বই পেলেও, ইংরেজি ভার্সনের একটি বইও পৌঁছায়নি বিদ্যালয়গুলোতে। মাধ্যমিকে নবম-দশম শ্রেণির একটিও বই আসেনি, বাকিরা পেয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তিনটি করে।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা, সব বই পেতে ফেব্রুয়ারি মাস পেরিয়ে যেতে পারে। এই বিলম্বিত সরবরাহের ফলে শিক্ষার্থীদের সময়সূচি মেনে ক্লাস না হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে, যার ফলে তাদের শিখনঘাটতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রামে প্রাথমিক স্তরের চাহিদার ৬৪ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরের মাত্র ৩০ শতাংশ বই এসেছে। গত বছরের আগস্টে উদ্ভুত রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পাঠ্যবইয়ে সংযোজন-বিয়োজন এবং পাঠ্যবই ছাপানোর কার্যাদেশ দিতে দেরি হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে বই আসেনি। পূর্বের আশ্বাস অনুযায়ী, জানুয়ারির মধ্যে সব বই পৌঁছানোর কথা থাকলেও তা হয়নি। কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের এনসিটিবির ওয়েবসাইট থেকে পাঠ্যবই সংগ্রহ করে ক্লাস নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত না ঘটে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, ছয় থানা শিক্ষা অফিসের মধ্যে চান্দগাঁও ছাড়া বাকি পাঁচটিতে প্রাক প্রাথমিকের শতভাগ বই এসেছে। ১৫ উপজেলার মধ্যে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী ও কর্ণফুলীতে এখনো একটি বইও আসেনি। চন্দনাইশ উপজেলা এবং পাহাড়তলী থানা শিক্ষা অফিসের আওতাধীন বিদ্যালয়গুলো বাংলা মাধ্যমের শতভাগ বই পেয়েছে। বাকি থানা শিক্ষা অফিসগুলো বেশিরভাগই চাহিদার ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ বই পেয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুর রহমান জানান, “বেশিরভাগ বই চলে এসেছে, অল্প কিছু বাকি আছে। মোট চাহিদার প্রায় ৬৫ শতাংশ বই পৌঁছেছে। আশা করছি, বাকি বইও দ্রুত পাবো।”
জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে মাধ্যমিক স্তরে বইয়ের চাহিদা ২ কোটি ৪৪ লাখ ৩২ হাজার ৯৩ কপি। ইবতেদায়ি, দাখিল, দাখিল ভোকেশনাল, মাধ্যমিক ভোকেশনাল, মাধ্যমিক বাংলা ও ইংলিশ ভার্সন মিলে মোট শিক্ষার্থী ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ৯৯৪ জন। এসেছে মাত্র ৫৩ লাখ বই, অর্থাৎ চাহিদার মাত্র ৩০ শতাংশ। ষষ্ঠ ও দশম শ্রেণির সব বই আসলেও, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির এসেছে তিনটি করে।
চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা বলেন, “এখন পর্যন্ত চাহিদার ৫৩ লাখ বই এসেছে। আরও বই আসছে। দশম ও ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই পেয়েছি। সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির তিনটি করে এসেছে। যেভাবে আসছে, আশা করছি এই মাসের মধ্যে সব বই চলে আসবে।”
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের ৪ হাজার ৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ১০ লাখ ৪ হাজার ৬৩২ জন। নতুন বইয়ের চাহিদা ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ১৮৭ কপি। প্রাক-প্রাথমিকে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৬, বাংলা মাধ্যমে ৪০ লাখ ৩৪ হাজার ১৯৬ এবং ইংরেজি মাধ্যমে ৮৮ হাজার ৫৮৪ কপি।
চট্টগ্রামের ৬ থানা শিক্ষা অফিস ও সব উপজেলা মিলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা মাধ্যমে শিক্ষার্থী ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৫৩৪ জন। প্রাক-প্রাথমিকে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৮ জন, বাংলা মাধ্যমে ৮ লাখ ৩৮ হাজার ১৬৬ জন এবং ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী ১৮ হাজার ৭৯০ জন। চট্টগ্রামের স্কুলগুলোতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ৩০৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য তাদের মাতৃভাষায় লেখা বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৬৭১ কপি, যা সীতাকুণ্ড এবং নগরের পাঁচলাইশ থানা শিক্ষা অফিসের আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা এবং গারো সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মাতৃভাষায় লেখা বই পেয়ে থাকে।