বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
প্রচ্ছদরাজনীতিচট্টগ্রামে 'সিটি গভর্নমেন্ট', বন্দরের রাজস্ব ভাগসহ পাঁচ দফা দাবি...

চট্টগ্রামে ‘সিটি গভর্নমেন্ট’, বন্দরের রাজস্ব ভাগসহ পাঁচ দফা দাবি এবি পার্টির

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামের উন্নয়নে পাঁচ দফা প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের জোর দাবি জানিয়েছেন আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে এবি পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর আয়োজিত “মিট দ্যা প্রেস” অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সঠিক মূল্যায়ন ছাড়া কর্ণফুলী টানেল এবং ফ্লাইওভারের মতো লুটপাটের প্রকল্প না করে একই বাজেট দিয়ে খুলনা/বাগেরহাট থেকে কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চলকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্প তৈরি করতে পারলে লক্ষ লক্ষ তরুণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হতো।”

তিনি অভিযোগ করেন, “লুটপাটের উন্নয়ন চট্টগ্রামবাসীর ভোগান্তি শুধু বাড়িয়েছে। পর্যাপ্ত এক্সিট পয়েন্ট না থাকায় এই ফ্লাইওভারগুলো যানজট বাড়িয়েছে, কমায়নি।” তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, “তাহলে ফ্লাইওভারগুলো দিয়ে চট্টগ্রামের কি উন্নয়ন হলো?”

ব্যারিস্টার ফুয়াদ চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারকে ঘিরে পর্যটন, মৎস্য এবং জাহাজ ভাঙা – এই তিনটি শিল্পের বিকাশের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, “আমাদের বঙ্গোপসাগর থেকে মায়ানমার এবং ভারতীয় জেলেরা মৎস্য আহরণ করে নিয়ে যায় অথচ আমাদের জেলেদের পর্যাপ্ত আধুনিক মাছ ধরার জাহাজ এবং প্রশিক্ষণ না থাকায় তারা গভীর সমুদ্র থেকে মৎস্য আহরণ করতে পাচ্ছে না।”

তিনি আরও বলেন, “সমুদ্র বিজয়ের নামে বাটপারি করে, আমাদের সমুদ্র এলাকা থেকে ভারত এবং মায়ানমার তেল গ্যাস নিয়ে যাচ্ছে অথচ বাপেক্সকে দায়িত্ব দিয়ে, সক্ষমতা বাড়িয়ে তেল গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।”

“মিট দ্যা প্রেস” অনুষ্ঠানে এবি পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর আহ্বায়ক এডভোকেট গোলাম ফারুক, কেন্দ্রীয় সহকারী সদস্য সচিব ও চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক ছিদ্দিকুর রহমান, চট্টগ্রাম মহানগর সহকারী সদস্যসচিব সৈয়দ আবুল কাশেম, অর্থ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার যায়েদ হাসান চৌধুরী সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ছিদ্দিকুর রহমান চট্টগ্রাম মহানগরীর উন্নয়নের লক্ষ্যে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছেন। এই প্রস্তাবনাগুলোর মূল লক্ষ্য হল চট্টগ্রাম শহরের শাসনব্যবস্থা, অর্থনীতি, পরিবেশ এবং অবকাঠামোর উন্নয়ন সাধন করা।

প্রথমত, তিনি চট্টগ্রাম মহানগরকে একটি “সিটি গভর্নমেন্ট”-এ উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এর মাধ্যমে শহরের প্রশাসনিক কাঠামো আরও সুসংহত হবে এবং স্থানীয় জনগণের প্রতিনিধিত্ব আরও বাড়বে। এই সিটি গভর্নমেন্টের জন্য একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠার কথাও বলা হয়েছে, যা প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে।

দ্বিতীয়ত, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে যে রাজস্ব অর্জিত হয়, তার একটি অংশ এই সিটি গভর্নমেন্টের সাথে ভাগ করে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে শহরের উন্নয়নকল্পে আরও বেশি অর্থ পাওয়া যাবে এবং সিটি গভর্নমেন্ট আর্থিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে।

তৃতীয়ত, কর্ণফুলী নদী এবং শহরের খালগুলোর সংস্কারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত সংস্কারের অভাবে এই নদী ও খালগুলো প্রায়ই ভরাট হয়ে যায়, যার ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তাই, জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য এদের সংস্কার অপরিহার্য। এছাড়াও, নগরীর সম্প্রসারণের জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণ এবং যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

চতুর্থত, চট্টগ্রামকে ব্যবসা এবং আমদানি-রপ্তানির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বন্দরের সুবিধা, ভৌগোলিক অবস্থান এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রামকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

পঞ্চমত এবং সবশেষে, পরিবেশের বিপর্যয় রোধে পাহাড় পুনরুদ্ধারের কথা বলা হয়েছে। চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাহাড় কাটা এবং অন্যান্য মনুষ্যসৃষ্ট কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তাই, পরিবেশের সুরক্ষার জন্য পাহাড় পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত জরুরি।

ব্যারিস্টার ফুয়াদ চট্টগ্রাম উন্নয়নে এবি পার্টির পাঁচ দফা প্রস্তাবনার ভিত্তিতে চট্টগ্রামবাসীকে সংগঠিত হওয়ার এবং সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।

এই বিভাগের আরও পড়ুন