ভাইরাস, অণুবীক্ষণিক জীবন্ত কণা, যা পোষকদেহের জীবন্ত কোষে বংশবিস্তার করে, পৃথিবীর বুকে এক আতঙ্কের নাম। বহনকারী প্রাণী বা উদ্ভিদের প্রাণঘাতী অনেক ব্যাধির কারণ এই ভাইরাস, কখনো কখনো যা মহামারীর রূপ ধারণ করে। সম্প্রতি, চীন থেকে উদ্ভূত কোভিড-১৯ এবং এইচএমপিভির নাম দুটি বহুল আলোচিত, যা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু, ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে দেখা যায়, কোভিড-১৯ এবং এইচএমপিভির চেয়েও ভয়ংকর অনেক ভাইরাস রয়েছে যা মানবসভ্যতাকে বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। কোভিড-১৯ অত্যন্ত সংক্রামক হলেও, মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে কম।
এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করবো বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর ১০টি ভাইরাস সম্পর্কে, যা মৃত্যুর মিছিল সৃষ্টি করে মানবজাতিকে বারবার বিপন্ন করেছে।
মারবুর্গ ভাইরাস: মৃত্যুর আরেক নাম
মারবুর্গ ভাইরাস, এক নীরব ঘাতক, পৃথিবীর বুকে এক আতঙ্কের নাম। ‘হেমোরেজিক’ জ্বর সৃষ্টিকারী এই ভাইরাসটি ইবোলা ভাইরাসের সমগোত্রীয় এবং মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর ভয়াবহতা এতটাই যে, আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ। ১৯৬৭ সালে প্রথম শনাক্ত হওয়া এই ভাইরাসটি আবিস্কারের পর থেকে বারবার তার ভয়াল থাবা বিস্তার করে মানব সভ্যতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
জার্মানির মারবুর্গ শহর, যেখানে ১৯৬৭ সালে সর্বপ্রথম এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, সেই শহরের নাম অনুসারেই এই ভাইরাসের নামকরণ করা হয় “মারবুর্গ ভাইরাস”। ল্যাবরেটরিতে গবেষণার জন্য উগান্ডা থেকে আমদানিকৃত আফ্রিকান সবুজ বানরের (African green monkey) মাধ্যমে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে বলে ধারণা করা হয়। জার্মানির মারবুর্গ এবং ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং সার্বিয়ার বেলগ্রেডে একযোগে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টনক নড়ে।
মারবুর্গ ভাইরাস ‘Filoviridae’ পরিবারের অন্তর্গত। এটি ‘RNA’ ভাইরাস, যা মূলত ফলখেকো বাদুড় (fruit bat)-এর দেহে বাস করে। এই বাদুড়গুলো এই ভাইরাসের প্রাকৃতিক পোষক (natural reservoir) হিসেবে কাজ করে। বাদুড় ছাড়াও, বানর এবং শূকরের দেহেও এই ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, দেহরস, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, এবং ব্যবহৃত সূঁচ ও সিরিঞ্জের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। এমনকি, আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমেও এই ভাইরাস সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়াও, আক্রান্ত ব্যক্তির মৃতদেহের সংস্পর্শে আসলেও এই ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। আক্রান্ত বানর, বাদুড়, শূকরের সংস্পর্শে আসলেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।
মারবুর্গ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে ২ থেকে ২১ দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে, প্রথম দিকে তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা, এবং ক্লান্তি দেখা দেয়। এরপর, বমি, ডায়রিয়া, বুকে ব্যথা, এবং পেটে ব্যথা শুরু হয়। রোগের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে জন্ডিস, অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ, তীব্র ওজন হ্রাস, প্রলাপ বকা, শক, যকৃতের অকার্যকারিতা, এবং রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ, এই ভাইরাসের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, মারবুর্গ ভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে, লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা, যেমন পানিশূন্যতা রোধ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা বজায় রাখার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়।
এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে, নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা জরুরি: আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহার না করা। আক্রান্ত এলাকায় ভ্রমণ না করা। বাদুড়, বানর, এবং শূকরের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। ভালোভাবে রান্না করা মাংস ছাড়া অন্য কোনো মাংস না খাওয়া। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
মারবুর্গ ভাইরাস বারবার তার ভয়াল রূপ ধারণ করে মানব সভ্যতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। এই ভাইরাসের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকায়, এর সংক্রমণ রোধ করাই একমাত্র উপায়। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিষেধক এবং চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য বিশ্বব্যাপী গবেষণা চলছে।
মারবুর্গ ভাইরাস, এক নীরব ঘাতক, যা যেকোনো মুহূর্তে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য, আমাদের আরও গবেষণা, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দিতে হবে।
ইবোলা ভাইরাস: আফ্রিকার অভিশাপ
ইবোলা ভাইরাস, একসময় আফ্রিকার অভিশাপ হিসেবে পরিচিত হলেও, বর্তমানে এটি সমগ্র বিশ্বের জন্য এক বিরাট হুমকি। এই ভয়ংকর ভাইরাস ঘটিত রোগ, ইবোলা ভাইরাস ডিজিজ (EVD), অত্যন্ত প্রাণঘাতী এবং এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায় আফ্রিকার দেশগুলোতে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতাবাহী এই ভাইরাস ১৯৭৬ সালে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের ইবোলা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে প্রথম শনাক্ত হয় এবং সেই নদীর নাম অনুসারেই এর নামকরণ করা হয়। ‘Filoviridae’ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এই ‘RNA’ ভাইরাসটির পাঁচটি প্রজাতির মধ্যে ‘জাইর ইবোলাভাইরাস’ সবচেয়ে মারাত্মক, যার মৃত্যুর হার ৯০% পর্যন্ত। ফলখেকো বাদুড়, বিশেষ করে ‘Pteropodidae’ পরিবারের বাদুড়, এই ভাইরাসের প্রাকৃতিক পোষক বলে ধারণা করা হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, দেহরস, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, ব্যবহৃত সূঁচ, সিরিঞ্জ, এমনকি শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমেও এই ভাইরাস সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করতে পারে। আক্রান্ত বাদুড়, বানর, শুকর, অ্যান্টিলোপের সংস্পর্শে আসলেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।
ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে ২ থেকে ২১ দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো তীব্র জ্বর, দুর্বলতা, পেশীতে ব্যথা, মাথাব্যথা, এবং গলা ব্যথা। পরবর্তীতে বমি, ডায়রিয়া, ত্বকে ফুসকুড়ি, এবং পেটে ব্যথার উপসর্গ দেখা দেয়। রোগের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে যকৃত ও বৃক্কের কার্যকারিতা হ্রাস পায় এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে। দুঃখজনকভাবে, ইবোলা ভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা, যেমন পানিশূন্যতা রোধ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা বজায় রাখার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়। সম্প্রতি, ‘Inmazeb’ এবং ‘Ebanga’ নামক দুটি ঔষধ ‘Zaire ebolavirus’ প্রজাতির চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পেয়েছে। এছাড়াও, ‘Ervebo’ নামক একটি টিকা ‘Zaire ebolavirus’ প্রজাতির বিরুদ্ধে কার্যকর।
ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহার না করা, আক্রান্ত এলাকায় ভ্রমণ না করা, বাদুড়, বানর, শুকর, অ্যান্টিলোপের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, ভালোভাবে রান্না করা মাংস ছাড়া অন্য কোনো মাংস না খাওয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। ইবোলা ভাইরাস বারবার তার ভয়াল রূপ ধারণ করে মানব সভ্যতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। যদিও কিছু ঔষধ এবং টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে, এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের আরও প্রস্তুতি প্রয়োজন। এই ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের আরও গবেষণা, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দিতে হবে।
হান্তাভাইরাস: ফুসফুসের ঘাতক
হান্তাভাইরাস, এক প্রকার RNA ভাইরাস যা মূলত ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর মাধ্যমে ছড়ায় এবং মানুষের দেহে হান্তাভাইরাস পালমোনারি সিনড্রোম (HPS) এবং হেমোরেজিক ফিভার উইথ রেনাল সিনড্রোম (HFRS) নামক দুটি মারাত্মক রোগের সৃষ্টি করে। ১৯৫০ সালে কোরিয়ান যুদ্ধের সময় আমেরিকান সৈন্যদের মধ্যে প্রথম এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় এবং ধারণা করা হয়, হান্তান নামক একটি নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছিল, যার ফলে এর নামকরণ করা হয় হান্তাভাইরাস। এই ভাইরাস ‘Bunyaviridae’ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। হান্তাভাইরাসের অনেক প্রজাতি রয়েছে, যার মধ্যে ‘Sin Nombre’ ভাইরাস (SNV) উত্তর আমেরিকায় HPS রোগের জন্য দায়ী এবং ‘Hantaan’, ‘Seoul’, ‘Dobrava’, এবং ‘Puumala’ ভাইরাস এশিয়া এবং ইউরোপে HFRS রোগের জন্য দায়ী।
হান্তাভাইরাস সংক্রমণের প্রধান বাহক হলো ইঁদুর জাতীয় প্রাণী, বিশেষ করে হরিণ ইঁদুর (deer mouse), সাদা পায়ের ইঁদুর (white-footed mouse), ধানের ইঁদুর (rice rat), এবং তুলার ইঁদুর (cotton rat)। এই ইঁদুরগুলো ভাইরাসের প্রাকৃতিক পোষক (natural reservoir) হিসেবে কাজ করে। আক্রান্ত ইঁদুরের লালা, মল-মূত্র, এবং প্রস্রাবের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে এই ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে। শুকনো মল-মূত্র বাতাসের সাথে মিশে ধুলিকণার মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথেও মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে।
হান্তাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণগুলো রোগের ধরণ অনুযায়ী ভিন্ন হয়। HPS এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো ক্লান্তি, জ্বর, এবং পেশীতে ব্যথা, বিশেষ করে উরু, কোমর, পিঠ এবং কাঁধে। এছাড়াও মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া, এবং পেটে ব্যথা হতে পারে। রোগের পরবর্তী পর্যায়ে শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসে পানি জমে। HFRS এর লক্ষণের মধ্যে রয়েছে তীব্র মাথাব্যথা, পিঠে এবং পেটে ব্যথা, জ্বর, ঠান্ডা লাগা, বমি বমি ভাব, এবং ঝাপসা দৃষ্টি। কিছু ক্ষেত্রে, মুখ, চোখ, এবং ত্বকে লালচে ভাব দেখা যায়। রোগের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে নিম্ন রক্তচাপ, তীব্র শক, রক্তনালীতে ছিদ্র এবং কিডনি অকার্যকর হয়ে যাওয়ার মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।
দুঃখজনকভাবে, হান্তাভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে, লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা, যেমন অক্সিজেন থেরাপি, তরল ব্যবস্থাপনা, এবং সহায়ক যত্নের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়। এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, ইঁদুরের আবাসস্থল পরিষ্কার রাখা, ইঁদুরের মল-মূত্র সাবধানে পরিষ্কার করা, এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। হান্তাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের আরও গবেষণা, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দিতে হবে।
বার্ড ফ্লু: পাখিদের থেকে সাবধান
বার্ড ফ্লু, যা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নামেও পরিচিত, মূলত পাখিদের সংক্রামক একটি ভাইরাল রোগ যা ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ এ ভাইরাসের বিভিন্ন স্ট্রেইন দ্বারা সংঘটিত হয়। এই ভাইরাস হাঁস, মুরগি, টার্কি, কোয়েল সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখিকে আক্রান্ত করে। তবে, কিছু কিছু বার্ড ফ্লু ভাইরাস, যেমন H5N1 এবং H7N9, মানুষেও সংক্রমিত হতে পারে এবং মারাত্মক অসুস্থতা, এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। মানুষে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের ঘটনা বিরল হলেও, এই ভাইরাসের উচ্চ মৃত্যুহার এবং মহামারী সৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য এক বিরাট হুমকি।
বার্ড ফ্লু ভাইরাস সাধারণত সংক্রামিত পাখির লালা, মিউকাস এবং মলের মাধ্যমে ছড়ায়। মানুষ সাধারণত সংক্রামিত পাখির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে, বিশেষ করে সংক্রামিত হাঁস-মুরগির খামারে কাজ করার সময়, আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়াও, সংক্রামিত পাখির মল দ্বারা দূষিত ধুলোবালি শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করলেও সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। তবে, মানুষ থেকে মানুষে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের ঘটনা অত্যন্ত বিরল।
মানুষে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের লক্ষণগুলো সাধারণ ফ্লু-এর মতোই, যেমন জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, এবং পেশী ব্যথা। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে, মারাত্মক শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অকার্যকারিতার মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। H5N1 ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর হার প্রায় ৬০%, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
বার্ড ফ্লু প্রতিরোধের জন্য, সংক্রামিত পাখির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, হাঁস-মুরগির খামারে কাজ করার সময় যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা, এবং ভালোভাবে রান্না করা মাংস ছাড়া অন্য কোনো মাংস না খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাও গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের জন্য বার্ড ফ্লু-এর টিকা বিদ্যমান, তবে তা সাধারণত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের, যেমন হাঁস-মুরগির খামারে কর্মরত ব্যক্তিদের, প্রদান করা হয়।
বার্ড ফ্লু ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের আরও গবেষণা, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দিতে হবে। বিশেষ করে, এই ভাইরাসের দ্রুত অভিযোজন (mutation) এবং নতুন নতুন স্ট্রেইন সৃষ্টির প্রবণতার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। না হলে, এই ভাইরাস ভবিষ্যতে এক ভয়াবহ মহামারীর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
লাসা ভাইরাস: ইঁদুরের উপদ্রব
লাসা ভাইরাস, ‘Arenaviridae’ পরিবারভুক্ত একটি ‘RNA’ ভাইরাস যা লাসা জ্বর নামক তীব্র জ্বর সৃষ্টি করে এবং পশ্চিম আফ্রিকায় জনস্বাস্থ্যের জন্য এক বিরাট হুমকি। ১৯৬৯ সালে নাইজেরিয়ার লাসা শহরে প্রথম এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়, যার কারণে এই ভাইরাসের নামকরণ করা হয় লাসা ভাইরাস। এই ভাইরাস মূলত ‘Mastomys natalensis’ নামক এক ধরণের বহু-স্তন বিশিষ্ট ইঁদুরের (multimammate rat) মাধ্যমে ছড়ায় যা সাব-সাহারান আফ্রিকায় ব্যাপকভাবে বিস্তৃত।
লাসা ভাইরাস আক্রান্ত ইঁদুরের মল-মূত্র, লালা এবং রক্তের মাধ্যমে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ সাধারণত এই ভাইরাস দ্বারা দূষিত খাবার বা পানি গ্রহণের মাধ্যমে কিংবা আক্রান্ত ইঁদুরের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। এছাড়াও, আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত বা শরীরজাত তরলের মাধ্যমেও এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে। পশ্চিম আফ্রিকার নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওন, এবং গিনি প্রভৃতি দেশে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি।
লাসা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে সাধারণত ১ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো জ্বর, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, পেশীতে ব্যথা, কাশি, এবং গলা ব্যথা। কিছু ক্ষেত্রে, বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া, এবং পেটে ব্যথা হতে পারে। রোগের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মুখ, নাক, এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এছাড়াও, বধিরতা, মস্তিষ্কের প্রদাহ (encephalitis), এবং গর্ভপাত ঘটতে পারে। লাসা জ্বরে মৃত্যুর হার প্রায় ১-১৫%, তবে গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে এই হার অনেক বেশি।
দুঃখজনকভাবে, লাসা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো টিকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। তবে, ‘Ribavirin’ নামক অ্যান্টিভাইরাল ঔষধ প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহার করলে রোগের তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ইঁদুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, ইঁদুরের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, খাবার এবং পানি ঢেকে রাখা, এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। লাসা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা এবং চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য বিশ্বব্যাপী গবেষণা অব্যাহত আছে। এই ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেদের এবং সমাজকে রক্ষা করতে পারি।
জুনিন ভাইরাস: আর্জেন্টিনার আতঙ্ক
জুনিন ভাইরাস, যা আর্জেন্টাইন হেমোরেজিক ফিভার (AHF) সৃষ্টির জন্য দায়ী, ‘Arenaviridae’ পরিবারভুক্ত একটি RNA ভাইরাস। এই ভাইরাস মূলত দক্ষিণ আমেরিকায়, বিশেষ করে আর্জেন্টিনার পাম্পাস অঞ্চলে, জনস্বাস্থ্যের জন্য এক উল্লেখযোগ্য হুমকি। ১৯৫৮ সালে আর্জেন্টিনার জুনিন শহরে প্রথম এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, যার ফলে এর নামকরণ করা হয় “জুনিন ভাইরাস”। এই ভাইরাস প্রধানত ‘Calomys musculinus’ নামক এক প্রজাতির ইঁদুরের মাধ্যমে ছড়ায় যা শুষ্ক অঞ্চলের ইঁদুর (drylands vesper mouse) নামে পরিচিত।
জুনিন ভাইরাস আক্রান্ত ইঁদুরের লালা, মল-মূত্র, এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ সাধারণত এই ভাইরাস দ্বারা দূষিত ধুলোবালি শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করলে, কিংবা আক্রান্ত ইঁদুরের কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। এছাড়াও, আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত বা দেহরসের সংস্পর্শে আসলেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। আর্জেন্টিনার গ্রামাঞ্চলে, বিশেষ করে কৃষি কাজের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।
জুনিন ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে সাধারণত ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, ক্লান্তি, দুর্বলতা, পেশী ব্যথা, এবং মাথাব্যথা। পরবর্তীতে, কনজাংটিভাইটিস, ত্বকে ফুসকুড়ি, এবং মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে। রোগের তীব্র পর্যায়ে, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ, স্নায়বিক জটিলতা, এবং শক দেখা দিতে পারে। চিকিৎসা না করা হলে, আর্জেন্টাইন হেমোরেজিক ফিভারে মৃত্যুর হার ১৫-৩০% পর্যন্ত হতে পারে।
সৌভাগ্যবশত, জুনিন ভাইরাসের বিরুদ্ধে ‘Candid #1’ নামক একটি কার্যকর টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। এই টিকা আর্জেন্টিনায় ১৯৮৫ সাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে এবং এটি AHF এর প্রকোপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সাহায্য করেছে। এছাড়াও, আক্রান্ত ব্যক্তিকে ইমিউন প্লাজমা থেরাপি এবং সহায়ক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ইঁদুরের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, ইঁদুরের আবাসস্থল পরিষ্কার রাখা, এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
জুনিন ভাইরাস মূলত আর্জেন্টিনার একটি আঞ্চলিক সমস্যা হলেও, ভ্রমণ এবং বাণিজ্যের প্রসারের ফলে এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকায় এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে, এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখা এবং আরও উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
ক্রিমিয়া-কঙ্গো জ্বর
ক্রিমিয়া-কঙ্গো হেমোরেজিক ফিভার (CCHF), যা ক্রিমিয়া-কঙ্গো জ্বর নামে পরিচিত, ‘Bunyavirales’ বর্গের ‘Nairoviridae’ পরিবারের ‘Orthonairovirus’ গোত্রের একটি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট এক মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এই ভাইরাস প্রাথমিকভাবে টিক (টিক এক ধরণের পোকা) এবং গৃহপালিত পশুর মাধ্যমে ছড়ায়। আফ্রিকা, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ১৯৪৪ সালে ক্রিমিয়াতে প্রথম এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালে কঙ্গোতে একই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায়, এই দুই অঞ্চলের নামানুসারে এই রোগের নামকরণ করা হয় ক্রিমিয়া-কঙ্গো হেমোরেজিক ফিভার।
CCHF ভাইরাস প্রধানত আক্রান্তের কামড়ের মাধ্যমে এই ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে। এছাড়াও, আক্রান্ত পশু, যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া, উট প্রভৃতির রক্ত, দেহরস, বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সংস্পর্শে আসলেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। রোগী ব্যক্তির রক্ত বা দেহরসের সংস্পর্শেও এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে। হাসপাতালের অপ্রতুল জীবাণুমুক্তকরণ ব্যবস্থা এবং ব্যবহৃত সুঁচ ও সিরিঞ্জের মাধ্যমেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
CCHF ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে সাধারণত ১ থেকে ৯ দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে আকস্মিক জ্বর, পেশী ব্যথা, মাথা ঘোরা, ঘাড়ে ব্যথা এবং শক্ত হয়ে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখ জ্বালাপোড়া এবং আলোভীতি (photophobia)। এছাড়াও, বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া, এবং পেটে ব্যথা হতে পারে। রোগের তীব্র পর্যায়ে, ত্বকের নিচে, মিউকাস মেমব্রেনে, এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্তক্ষরণ হতে পারে। রোগীর নাক, মাড়ি, এবং প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে, যকৃত এবং বৃক্কের অকার্যকারিতা, এবং আকস্মিক শ্বাসযন্ত্রের ব্যর্থতা দেখা দিতে পারে। CCHF ভাইরাসের মৃত্যুর হার প্রায় ১০-৪০%।
দুঃখজনকভাবে, CCHF ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো নির্দিষ্ট ঔষধ বা টিকা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। এই রোগের চিকিৎসা মূলত সহায়ক এবং লক্ষণভিত্তিক। রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা, পানিশূন্যতা রোধে তরল প্রদান, এবং রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণে রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থা করা হয়। এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য টিকের কামড় এড়িয়ে চলা, গৃহপালিত পশুর সাথে কাজ করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা, এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। যেহেতু এই ভাইরাস প্রাণী এবং মানুষ উভয়ের জন্যই মারাত্মক, তাই CCHF প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং দ্রুত রোগ নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি এবং টিকা উদ্ভাবনের জন্য বিশ্বব্যাপী গবেষণা অব্যাহত আছে।
মাচুপো ভাইরাস: বলিভিয়ার বিভীষিকা
এ ভাইরাসে সংক্রমণের ঘটনা বলিভিয়ায় দেখা গেছে। এতে জ্বর এবং শরীর থেকে রক্তক্ষরণের মতো লক্ষণ দেখা যায়। একে ব্ল্যাক টাইফাসও বলা হয়। রোগীর তীব্র জ্বর হয় এবং তার শরীর থেকে দ্রুত রক্ত বের হয়। এ ভাইরাস একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে। এটি প্রায়শই ইঁদুর ছড়ায়। বলিভিয়ান হেমোরেজিক ফিভার (BHF) নামক এই রোগের মৃত্যুর হার ৫-৩০ শতাংশ।
ক্যাসানুর বন ভাইরাস: ভারতীয় জঙ্গলে আতঙ্ক
বিজ্ঞানীরা ১৯৫৫ সালে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে ক্যাসানুর বন ভাইরাস আবিষ্কার করেন। এটি টিক্স দ্বারা ছড়ায়। রোগীর তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা এবং পেশীতে ব্যথা হয়। তার শরীর থেকে রক্ত ঝরে। ক্যাসানুর ফরেস্ট ডিজিজ (KFD) নামক এই রোগের মৃত্যুর হার ৩-৫ শতাংশ।
ডেঙ্গু জ্বর
ডেঙ্গু মশা দ্বারা ছড়ায়। এটি প্রতি বছর ৫০ থেকে ১০০ মিলিয়ন মানুষকে আক্রান্ত করে। চিকিৎসা পেলে রোগীর প্রাণ বাঁচে। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, পেশী এবং জয়েন্টে ব্যথা, ক্লান্তি, এবং ত্বকে লাল ফুসকুড়ি। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (DHF) এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (DSS) নামক দুটি মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, এই দশটি ভাইরাস মানবজাতির জন্য কতটা ভয়ংকর। এই ভাইরাসগুলির সংক্রমণ রোধে আমাদের সকলের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বাহক প্রাণীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, এবং টিকা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা এই ভাইরাসগুলির সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।
এই ভাইরাসগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য, আমাদের আরও গবেষণা, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দিতে হবে।