বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
প্রচ্ছদটপ নিউজলবণের দাম তলানিতে, দুশ্চিন্তায় কক্সবাজারের ৬৫ হাজার চাষি

লবণের দাম তলানিতে, দুশ্চিন্তায় কক্সবাজারের ৬৫ হাজার চাষি

কক্সবাজার প্রতিনিধি

মহেশখালীর হোয়ানকের লবণ চাষি মোহাম্মদ সাকের ৬ কানি জমি ইজারা নিয়ে লবণ চাষ করছেন। মৌসুমের এই মধ্য সময়ে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ভালো উৎপাদন হলেও লবণের দাম তলানিতে নেমে যাওয়ায় তিনিসহ কক্সবাজার উপকূলের প্রায় ৬৫ হাজার চাষি চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। বর্তমানে প্রতি মণ লবণ সর্বোচ্চ ২২০ টাকায় বিক্রি হলেও উৎপাদন খরচ পড়ছে ৩০০ টাকারও বেশি।

কক্সবাজার লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, গত মৌসুমে মণ প্রতি লবণের দাম ৫৫০ টাকা থাকলেও চলতি মৌসুমে তা কমে ২২০ টাকায় নেমে এসেছে, যা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। চাষিরা বলছেন, এই দামে জমির ইজারা, শ্রমিকের মজুরি, পানি সেচ, পলিথিনসহ অন্যান্য খরচই উঠবে না।

কক্সবাজার লবণচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি সাহাব উদ্দীন জানান, তিন কানি জমি ইজারা নিতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর সাথে মাঠ তৈরি, পানি সেচ, পলিথিন এবং শ্রমিক খরচ মিলিয়ে কানি প্রতি আরও ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ পড়বে। উৎপাদন ভালো হলেও বর্তমান বাজার দরে তিন কানিতে এক লাখ টাকার বেশি লোকসান গুনতে হবে।

চাষিরা অভিযোগ করছেন, বিদেশ থেকে লবণ আমদানিকারী সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট কারসাজি করে লবণের দাম কমিয়েছে। সম্প্রতি কালোবাজারির মাধ্যমে একটি বড় চালান আমদানির চেষ্টা করা হলেও সরকারের হস্তক্ষেপে তা আটকে যায়। কিন্তু এরপরও লবণের দাম রহস্যজনকভাবে কমে গেছে।

চৌফলদন্ডীর লবণচাষি মো. হোসেন বলেন, “এভাবে লবণের দরপতন হলে আমরা কোথায় যাব? আমাদের তো আর কোনো উপায় নেই। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে পরিবার-পরিজন নিয়ে উপোস থাকতে হবে।”

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প (বিসিক) সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ ২৪ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছিল। চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। বিসিক কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ রিদওয়ানুর রশীদ বলেন, দেশে লবণের চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন। কক্সবাজার ও বাঁশখালীর অন্তত ৬৫ হাজার একর জমিতে ৬৫ হাজার চাষি লবণ উৎপাদন করে থাকেন। লবণের দরপতনে চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষিরা।

কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া বলেন, “প্রতিবছর একই সাথে সক্রিয় হয়ে উঠে লবণ শিল্পের দুশমন আমদানিকারী সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটটি। তারা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ভুল বুঝিয়ে লবণ আমদানির পাঁয়তারা করেন। এবারও একই কারসাজি করেছে। তাদের নগ্ন কারসাজিতে লবণের দরপতন হয়েছে।”

চাষিরা সরকারের কাছে লবণের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও পড়ুন