বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
প্রচ্ছদশিক্ষা৯ সরকারি কলেজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হচ্ছে, তবে কবে?

৯ সরকারি কলেজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হচ্ছে, তবে কবে?

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের ৯টি সরকারি কলেজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অধিভুক্ত করার নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত বছরের এপ্রিল মাসে দুই দফায় দেওয়া এ নির্দেশনার ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষক স্বল্পতা ও অবকাঠামোগত দিক বিবেচনা করে এ অধিভুক্তি কতটা কল্যাণকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গত এপ্রিলে অধিভুক্তির নির্দেশনা পেয়ে তৎকালীন চবি উপাচার্য প্রফেসর আবু তাহের কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের সাথে একটি সভা করেছিলেন। সভায় কলেজগুলোর বিভিন্ন তথ্য নেয় চবি কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে কলেজগুলোকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা জানানোর কথা থাকলেও কিছুই জানানো হয়নি। এরপর নতুন প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং এ নিয়ে আর কোনো আলোচনা হয়নি।

বর্তমান প্রশাসন জানিয়েছে, মন্ত্রণালয়কে একটি পর্যালোচনা পাঠানো হয়েছে এবং কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এদিকে ৯টি কলেজ এখনো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কলেজগুলো চবির আওতাভুক্ত হবে কিনা, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন ৯ কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী নির্দেশনা না পেয়ে বিষয়টি নিয়ে চবি কর্তৃপক্ষও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারছে না।

ঢাবির অধিভুক্ত কলেজগুলোর সমস্যা বিবেচনা করে অনেকেই মনে করছেন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে। অধিভুক্তির সিদ্ধান্ত বহাল থাকলেও কোন প্রক্রিয়ায় হবে, সেটাও জানানো হবে।

জানা যায়, অধিভুক্তির নির্দেশনার পর কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের সাথে একটি সভা করা হলেও কোটা আন্দোলন, কারফিউ, শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি – এসকল ঘটনার প্রেক্ষিতে বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। নতুন উপাচার্য প্রফেসর ড. ইয়াহ্‌ইয়া আখতার দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন প্রশাসনিক কাঠামো ঢেলে সাজিয়েছেন। তবে এখনও ৯ কলেজকে অধিভুক্ত করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি।

ঢাবির মতো পরিস্থিতি চট্টগ্রামেও সৃষ্টি হবে কিনা– তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা।

গত বছরের ২২ এপ্রিল চট্টগ্রামের চারটি কলেজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হলো, সরকারি সিটি কলেজ, গাছবাড়ীয়া সরকারি কলেজ (চন্দনাইশ), চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ ও পটিয়া সরকারি কলেজ। এর আগে ৪ এপ্রিল আরও পাঁচটি কলেজ চবির অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হলো, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, হাজী মুহম্মদ মহসিন সরকারি কলেজ, স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ (বোয়ালখালী), সরকারি কমার্স কলেজ ও সাতকানিয়া সরকারি কলেজ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ–সচিব রোখছানা বেগমের স্বাক্ষরিত পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নয়টি কলেজকে চবির অধিভুক্ত করা হয়।

সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ছাড়া ৯ কলেজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার পক্ষে নন অধিকাংশ শিক্ষার্থী–শিক্ষকরা। তারা বলছেন, অধিভুক্ত মানে কলেজের সব কিছু চবির অধীনে চলে যাওয়া। সকল সার্টিফিকেট মার্কশিট চবি থেকে তুলতে হবে। এখন সেই সক্ষমতা চবির আছে কিনা সেটাও দেখতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭ হাজার। এর বাইরে পরিকল্পনা ছাড়া ৯ কলেজের শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব নিলে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে প্রতিষ্ঠানটিতে। পর্যাপ্ত জনবল ও সুযোগ–সুবিধার অভাবে নিজস্ব শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পরীক্ষা নেওয়া ও ফল তৈরিতে বিলম্বের কারণে বেশ কয়েকটি বিভাগে সেশনজট রয়েছে।

মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মাদ কামরুল ইসলাম জানান, অধিভুক্ত করার প্রজ্ঞাপনের পর বিষয়টি নিয়ে গত বছরের এপ্রিলে চবি কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের একটি সভা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে চবি থেকে আর কোনো আপডেট জানানো হয়নি।

চবি কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. আমির মোহাম্মদ নসরুল্লাহ জানান, অধিভুক্তির ঘোষণার পর মন্ত্রণালয় থেকে একটি মতামত পাঠাতে বলা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেটি পাঠানো হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় থেকে যেটা জানানো হবে, সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে।

এই বিভাগের আরও পড়ুন