বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
প্রচ্ছদচট্টগ্রামঅনলাইন জুয়ার থাবা: আসক্তি বাড়ছে, ঘটছে হত্যা-আত্মহত্যা

অনলাইন জুয়ার থাবা: আসক্তি বাড়ছে, ঘটছে হত্যা-আত্মহত্যা

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

লোহাগাড়ায় অনলাইন জুয়ার বিষাক্ত থাবা দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। সহজে প্রচুর টাকা উপার্জনের লোভে পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষ এই জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে অনেক পরিবারে নেমে আসছে অশান্তি, বাড়ছে দাম্পত্য কলহ। এমনকি জুয়ার কারণে হত্যা-আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে।

গত ১৪ জানুয়ারি লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান ইউনিয়নের উত্তর কলাউজান রাবার ড্যাম এলাকায় এক মন্দিরের সামনে মো. জাহেদ (২০) নামে এক যুবকের মরদেহ পাওয়া যায়। পুলিশের তদন্তে জানা যায়, অনলাইন জুয়ার টাকা লেনদেনের জেরে বন্ধুরা তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় জড়িত দুই বন্ধুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা আদালতে অনলাইন জুয়ার টাকা লেনদেনকে কেন্দ্র করে বন্ধুকে শ্বাসরোধে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে।

এর আগেও উপজেলা সদরের এক ভাড়া বাসায় অনলাইন জুয়ায় নিঃস্ব হয়ে এক যুবক আত্মহত্যা করেছিলেন। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অনলাইন জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও এই জুয়া বিস্তার লাভ করেছে। বিশেষ করে তরুণরা কৌতূহলবশত এই খেলা শুরু করে পরে নেশায় পড়ে যাচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হওয়ায় ওই টাকা দেশীয় দালালদের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হচ্ছে। অনলাইনে অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় অপরাধীরা। এছাড়া জুয়ার কারণে এলাকায় বেড়েছে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই সহ নানা অপরাধ।

অনলাইন জুয়ায় জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, অনলাইন জুয়া খেলতে প্রয়োজন স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট সংযোগ। স্মার্টফোনে বিভিন্ন নামের প্রায় ১০-১২টির মতো অ্যাপসে সবচেয়ে বেশি জুয়া খেলা হয়। এসব অ্যাপসে ১০ টাকা থেকে শুরু করে যেকোনো অংকের টাকা দিয়ে শুরু করা যায়। এসব খেলা স্বাভাবিক গেমের মতো হওয়ায় প্রকাশ্যে খেললেও আশপাশের মানুষ বুঝতে পারে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রথম অংশগ্রহণকারীদের জুয়ায় জিতিয়ে লোভে ফেলা হয়। এরপর নেশা ধরে গেলে একের পর এক টাকা হারানোর ঘটনা ঘটতে থাকে।

এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, তার ছেলে স্থানীয় এক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কিন্তু অনলাইন জুয়ার কারণে পড়ালেখায় মনোযোগ নেই। কোনোভাবেই বিরত রাখা যাচ্ছে না। অনলাইন জুয়া ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিচ্ছে। অনলাইন জুয়ার সাইটগুলো বন্ধ ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।

লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান বলেন, অনলাইন জুয়ার ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। যাদের মোবাইলে অনলাইন জুয়ার অ্যাপস পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইনামুল হাছান বলেন, অনলাইন জুয়ার ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে উপজেলার সব ইউনিয়নে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। অভিভাবকদের সন্তানের প্রতি নজরদারি বাড়াতে হবে। অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

এই বিভাগের আরও পড়ুন