বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
প্রচ্ছদশিক্ষাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো বিপর্যয়ের মুখে

দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো বিপর্যয়ের মুখে

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাস মহামারীর সময় দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাপক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। এই সময়ে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ব্যাহত হয়, যা দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে এক ভয়াবহ দুশ্চিন্তার সূচনা করে। মহামারীর পর ধাপে ধাপে অচলাবস্থা কাটানোর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণে গত কয়েক বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে বারবার হোঁচট খেতে হয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থায় এই ধারাবাহিক সংকট শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের জন্য অস্থিরতার সৃষ্টি করেছে।

সর্বশেষ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষাক্ষেত্রে নানা সমস্যা তীব্র হয়েছে। জুলাই ২০২৪-এ শুরু হওয়া আন্দোলনের কারণে প্রায় চার মাস ধরে সমস্ত ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। যদিও সেপ্টেম্বর মাসে আবার শিক্ষাক্রম শুরু করার চেষ্টা করা হয়, তবে তা স্বাভাবিক হয়নি। ছাত্রদের নানা দাবি ও আন্দোলনের কারণে শিক্ষাক্রম বারবার ব্যাহত হচ্ছে, ফলে সেশনজটের আশঙ্কাও বিদ্যমান। সেশনজটের ফলে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী সেমিস্টার বা বর্ষের জন্য তাদের পড়াশোনার পরিকল্পনা করতে পারছে না, যা তাদের একাডেমিক অগ্রগতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত আন্দোলনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায় ছয় মাসের সেশনজটে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচ মাসে সেমিস্টার এবং ১১ মাসে বর্ষ শেষ করার পরিকল্পনা সত্ত্বেও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সমন্বিত পরিকল্পনা দেখা যায়নি। এর ফলে অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত হচ্ছে এবং কিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষায় আবেদন করতে পারছেন না। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের অনেক বিভাগের শিক্ষার্থী সম্প্রতি ঘোষিত ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন করতে পারেননি, যখন একই বর্ষের অনেক শিক্ষার্থী চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে আবেদন করতে সক্ষম হয়েছেন। এই অসামঞ্জস্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

সেপ্টেম্বর মাসে শিক্ষাক্রম শুরু হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের দাবিদারির কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে নামেন। তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন এবং যাত্রীবাহী ট্রেনে ঢিল ছুড়ে শিশুসহ অনেক যাত্রীকে আহত করেন। এছাড়া ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে ভাঙচুর এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) আজিজ হল ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের লতিফ হলের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এসব ঘটনার ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কয়েকদিন ধরে বন্ধ থাকতে বাধ্য হয়, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে।

এই ধরনের ঘটনা চোখ এড়ায়নি শিক্ষা উপদেষ্টার। শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, “দেশের বিভিন্ন স্থানে নানাবিধ ঘটনার প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ কর্মসূচি এবং কিছু ক্ষেত্রে দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলার (মব জাস্টিস) মতো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং শিক্ষার পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে।” তিনি উপাচার্যদের ছয়টি নির্দেশনা প্রদান করেন শিক্ষার পরিবেশ সুস্থ রাখার জন্য। তবে শিক্ষাক্ষেত্রে স্থায়ী সংস্কারের অভাব শিক্ষাবিদদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের প্রভাব

স্বাধীনতার পর দেশ সাতবার শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের সম্মুখীন হয়েছে এবং মূল্যায়ন পদ্ধতিও তিনবার বদলে গেছে। বিশেষ করে গত দেড় দশকে শিক্ষাক্রমের ঘন ঘন পরিবর্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, স্বাধীনতার পাঁচ দশকেরও অধিক সময় পার হলেও দেশের শিক্ষাক্রম কী হবে, তা এখনো দেশের বাস্তবতার নিরিখে সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ হয়নি। শিক্ষাব্যবস্থা যুগোপযোগী করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়াই ঘন ঘন শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ওপর। একটি নতুন শিক্ষাক্রমে অভ্যস্ত হতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেক সময় এবং সম্পদ ক্ষয় হয়েছে, যা শিক্ষার মান হ্রাসের দিকে নিয়ে গেছে।

পরিকল্পনাহীন সংস্কার ও ক্ষোভ

ব্রিটিশ শাসনামলের থেকে চলে আসা পরীক্ষানির্ভর মূল্যায়ন পদ্ধতি ২০২৩ সালে অভিজ্ঞতানির্ভর মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তিত হয়, যা গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার দ্বারা প্রবর্তিত হয়। এই শিক্ষাক্রমে শেখানোর পন্থা, মূল্যায়ন ব্যবস্থা সহ শিক্ষার প্রচলিত পদ্ধতিই বদলে ফেলা হয়েছিল। একের পর এক শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের ফলে শ্রেণিকক্ষের পাঠদান ও মূল্যায়ন পদ্ধতি পাল্টে যায়, ফলে শিক্ষার্থীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অভিভাবক মহলে তুমুল সমালোচিত নতুন শিক্ষাক্রম থেকে অন্তর্বর্তী সরকার গত ১ সেপ্টেম্বর মুখ ফিরিয়ে নেয়। সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানিয়েছে, “নতুন শিক্ষাক্রম থেকে সরকার মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় শিক্ষক প্রশিক্ষণের পুরো টাকা অপচয় হয়েছে।” সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সাফ জানিয়েছে।

শিক্ষা কমিশনের অভাব ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা

আন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ছয়টি কমিশন গঠনের সময়ই ‘শিক্ষা কমিশন’ গঠন করা উচিত ছিল, তবে তা হয়নি। সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন বলেন, “আন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বিভিন্ন কমিশন গঠিত হলেও কোনো শিক্ষা কমিশন গঠন হয়নি, যা দুঃখজনক।” তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতার পরেও বেশ কয়েকবার শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছে, তবে তা যথাযথ সুফল বয়ে আনতে পারেনি। আমরা চাই এই দফায় একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন হবে।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, “শিক্ষা নিয়ে তো প্রথম সংস্কার কমিশন হওয়া উচিত। যত কমিশনই হোক, মানুষ যদি সুশিক্ষিত না হয়, কোনো সিস্টেমে কাজ হবে না।”

গুচ্ছ পরীক্ষার সমস্যাসমূহ

গত কয়েক বছর ধরে দেশের ২৪টি সাধারণ ও বিজ্ঞানপ্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে জিএসটি গুচ্ছ, তিনটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে প্রকৌশল এবং নয়টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কৃষিগুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ও খরচ কমাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়। তবে গুচ্ছ ভর্তিতে দীর্ঘসূত্রতা, সময়ক্ষেপণ, উপাচার্যদের সিদ্ধান্তহীনতা, ভর্তি ক্ষেত্রে নানা জটিলতার কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি নিতে চায় নিজস্ব কাঠামোতে। শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ গত ২৭ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তিতে গুচ্ছ পদ্ধতির বিষয়ে জরুরি বৈঠক করেন। সেখানে শিক্ষকদের বেশি এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে মতামত দেয়। তবে গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতির পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি থাকলেও, শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এখনই এই পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে না আসার অনুরোধ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, “বর্তমানে প্রচলিত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এলে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।” ফলে এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো পক্ষসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।

উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তুলছে এবং পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম ও প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে ২৩ সেপ্টেম্বর নিয়োগপ্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তুলছে। তারা বলছে, “তিন মাসের মধ্যে তিনি কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে বারবার বলার পরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। জুলাই আন্দোলনে হামলাকারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” গত ২৬ নভেম্বর রাতে শিক্ষার্থীদের একজন অংশের বাধার মুখে যোগদান করতে এসেও ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে বাধ্য হন নতুন কোষাধ্যক্ষ আবু হেনা মোস্তফা কামাল খান। পরদিন সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবি জানান এবং উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দেন। শিক্ষার্থীদের ওই অংশকে নিয়ে রবিবার সকাল থেকে পাঁচ ঘণ্টা বৈঠক করেন উপাচার্য, তবে সমঝোতা ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। এই ঘটনার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে অস্থায়ী বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সংকট

শিক্ষার্থীরা এই দীর্ঘকালীন অস্থিরতা ও আন্দোলনের পরেও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মিরপুর এলাকার বাসিন্দা আল রাজি (ছদ্মনাম) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। আন্দোলনের মধ্যে অনেক কিছু দেখার পর, চলতি সময়ে তিনি ঘুমের মারাত্মক ব্যাঘাত এবং মেজাজের উগ্রতা ভোগ করছেন। এ ধরনের অবস্থায়, তার মত আরও অসংখ্য শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসকের মতে, আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের সহিংসতার ভয়ংকর স্মৃতি ফিরে ফিরে আসতে পারে, ফলে তাদের পড়াশোনায় আগের মতো মনোযোগ বা আগ্রহ কমে যেতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী বলেন, “যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্যাতন, হত্যা, গুলিবর্ষণের ঘটনাগুলো দেখেছে এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখতে হবে।”

শিক্ষা কমিশনের অভাব ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা

আন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বিভিন্ন কমিশন গঠিত হলেও কোনো শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়নি, যা শিক্ষাবিদদের মধ্যে গভীর ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন বলেন, “আন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বিভিন্ন কমিশন গঠিত হলেও কোনো শিক্ষা কমিশন গঠন হয়নি, যা দুঃখজনক।” তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতার পরেও বেশ কয়েকবার শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছে, তবে তা যথাযথ সুফল বয়ে আনতে পারেনি। আমরা চাই এই দফায় একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন হবে, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিতভাবে শিক্ষা সংস্কারে কাজ করবে।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ দেশ রূপান্তর বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশে কিছুটা পরিবর্তন এলেও শিক্ষার সামগ্রিক খাত আগের মতোই রয়েছে। কোনো ধরনের সংস্কার এখনো দেখা যায়নি। একটা যথাযথ শিক্ষা কমিশন খুবই প্রয়োজন ছিল।”

ভবিষ্যতে শিক্ষা ব্যবস্থার দিকনির্দেশনা

ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ এবং অন্যান্য শিক্ষাবিদরা শিক্ষাক্ষেত্রে স্থায়ী সংস্কার ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছেন। তিনি বলেন, “পরিকল্পিত কোনো কারিকুলাম হয়নি, শিক্ষায় বাজেট বাড়েনি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। শিক্ষা নিয়ে সরকারকে এখনো সিরিয়াস মনে হয়নি।” বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. এসএমএ ফয়েজ বলেন, “একটা নতুন অবস্থায় সবকিছুকে নতুনভাবে চিন্তাভাবনা করতে হচ্ছে। এখানে কিছু কিছু সমস্যা থাকবে এটা অস্বাভাবিক নয়। আমার বিশ্বাস, ছাত্ররা অত্যন্ত পজিটিভ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন প্রশাসন এসেছে, তারা কাজ করছে। আশা করি সমস্যাগুলো বের করে তারা সমাধান নিয়ে আসবে।”

শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার প্রসঙ্গে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গত ৩ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস মতবিনিময় সভা করেন। শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ শোনেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। যেন বাংলাদেশে কেউ শিক্ষিত না হয়ে উঠতে পারে, দক্ষ হয়ে উঠতে না পারে, সেজন্য পরিকল্পিতভাবে এটা করা হয়েছে। বেকারত্ব তৈরি করা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক কিছু নেই। এটা আমাদের ঠিক করতে হবে। তরুণদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।”

দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। কোভিড মহামারী, রাজনৈতিক আন্দোলন, শিক্ষাক্রম পরিবর্তন ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বাধা সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষাক্ষেত্রে স্থায়ী সংস্কারের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলিকে একত্রে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং সরকারকে মিলিতভাবে একটি সুসংগত ও স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করে শিক্ষাব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের দিকে অগ্রসর হতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা পেতে পারে এবং দেশের উন্নয়নে তাদের ভূমিকা সক্রিয়ভাবে রাখতে পারে।

এই বিভাগের আরও পড়ুন