চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং পার্বত্য অঞ্চলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত এক মাসে এ ধরনের ১০টি পৃথক দুর্ঘটনায় অন্তত ১৮ জন মোটরসাইকেল আরোহী প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।
গত বৃহস্পতিবার মীরসরাইয়ের মায়ানী ইউনিয়নের বড়ুয়াপাড়ার তিন বন্ধু বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
এর আগে ১১ জানুয়ারি পটিয়ায় দাওয়াত শেষে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নাজিম উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ তাহমিদ (১২) নিহত হয়। ৩ জানুয়ারি উখিয়া, খাগড়াছড়ি ও সাতকানিয়ায় পৃথক দুর্ঘটনায় ৪ জন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন।
এছাড়া গত এক মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও অন্তত ১৫ জন। এরমধ্যে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে মহাসড়কে। বেপরোয়া বাস কিংবা দ্রুতগতির ট্রাক অধিকাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল ও ভারী যানবাহন চালানো, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ নানা কারণে চট্টগ্রামের সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা থামছে না। মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি রোধ করা এবং ট্রাফিক আইন কড়াকড়ি করাসহ সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব বলেও মনে করেন তারা।
বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের ২০২৪ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ২৯৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। যা সারাদেশের মোট দুর্ঘটনার ১৮.৭৩ শতাংশ। এরমধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ৪১৩ জন। যা সারাদেশের মোট নিহতের ১৯.৩৭% শতাংশ। এই হিসাবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী হলেও অনেক সড়ক অপ্রশস্ত। এছাড়া বেপরোয়া গতি ও অদক্ষ ব্যক্তি গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।
দক্ষ চালক তৈরি, চালকদের বেতন–কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, পরিবহন মালিক–শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা তৈরি করা গেলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
চট্টগ্রামের বার আউলিয়া হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, হেলমেট ব্যবহার না করা, ট্রাফিক নিয়ম না মানা, বেপরোয়া গতি এবং নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোয় দুর্ঘটনা বাড়ছে।