বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
প্রচ্ছদস্বাস্থ্যমশা মারতে কোটি কোটি টাকা, তবুও ডেঙ্গুতে মৃত্যুর মিছিল...

মশা মারতে কোটি কোটি টাকা, তবুও ডেঙ্গুতে মৃত্যুর মিছিল থেমে নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতি বছর ডেঙ্গু মৌসুম এলেই মশানিধন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের ১১টি সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়নে মশা মারার জন্য ৩৬০ কোটি ২৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অথচ ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ৭০৫ জন এবং ২০২৪ সালে ৫৭০ জন মারা গেছেন। বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হলেও মশা নিয়ন্ত্রণে আসছে না।

স্থানীয় সরকার ও সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মশানিধনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ ছিল ১২২ কোটি টাকা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাজেট ছিল ৪৭ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ ছিল ৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

এছাড়াও, গাজীপুর সিটিতে ৪ কোটি ৭০ লাখ, নারায়ণগঞ্জ সিটিতে ২ কোটি, রাজশাহী সিটিতে ৭৩ লাখ ২৮ হাজার, রংপুর সিটিতে ৭৫ লাখ, বরিশাল সিটিতে ৬ কোটি এবং খুলনা সিটি করপোরেশনের বাজেট ছিল ১০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ ছিল ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।

অন্যদিকে, সিলেট সিটি করপোরেশনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মশানিধনের জন্য কোনো বরাদ্দ ছিল না। ৪২টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সিলেট সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় মশা নিধনের জন্য ২৫০ জনের মতো জনবল প্রয়োজন, কিন্তু বাস্তবে আছে মাত্র দুজন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন জানান, বছরব্যাপী সিটি করপোরেশন মশক নিধন কর্মসূচি পরিচালনা করে। প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ডে লার্ভিসাইডিং এবং ফগিং করা হয়।

তিনি আরও বলেন, সারা দেশ থেকে জটিল ডেঙ্গু রোগীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। তাই মশকনিধনে নির্দিষ্ট এলাকা নয়, সবাইকে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করা জরুরি।

স্থানীয় সরকার বিভাগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার বিভাগ দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনকে ডেঙ্গু মোকাবিলায় ৩২ কোটি টাকা এবং গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচারের জন্য ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, যার মধ্যে ৫৭৫ জন মারা যান। ২০২৩ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৭০৫ জনের।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ না ঘটলে চলতি বছরও বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, মশক নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন। বিজ্ঞানভিত্তিক এবং সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।

এই বিভাগের আরও পড়ুন