বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
প্রচ্ছদচট্টগ্রামচট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: কাঙ্ক্ষিত গাড়ি চলছে না, লোকসানের আশঙ্কা

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: কাঙ্ক্ষিত গাড়ি চলছে না, লোকসানের আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বহুল প্রতীক্ষিত চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, যা বর্তমানে শহীদ ওয়াসিম আকরাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নামে পরিচিত, গত ৩ জানুয়ারি টোল দিয়ে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকেই এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের সংখ্যা অনেক কম।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করে। সমীক্ষা অনুযায়ী, এই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে দৈনিক ৮১ হাজার ৪৭১টি যানবাহন চলাচল করার কথা। কিন্তু টোল দিয়ে যান চলাচল শুরুর দিনই চলাচল করেছে মাত্র ৩ হাজার ৪৬২টি যানবাহন, যা সমীক্ষার ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে গাড়ি চলছে ৫ থেকে ৭ হাজার।

এই পরিস্থিতিতে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে ব্যয়িত অর্থ উঠে আসবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, “প্রকল্পটি শুরুর সময়ই আমরা বলেছিলাম এটি দিয়ে গণপরিবহন চলাচল করবে না। অথচ অধিকাংশ যাত্রীই গণপরিবহন ব্যবহার করে। সবাই তো আর প্রতিদিন পতেঙ্গা আর বিমানবন্দর যাতায়াত করবে না।”

তিনি আরও বলেন, এক্সপ্রেসওয়েটির সব কাজ এখনো শেষ হয়নি। অনেক র‌্যাম্প তৈরি এখনো বাকি। তাই দ্রুত র‌্যাম্প নির্মাণ শেষ করে যান চলাচল বৃদ্ধি করা উচিত।

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, “এখন প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ হাজার গাড়ি চলাচল করে। এসব গাড়ি থেকেই টোল আদায় হচ্ছে। নির্মাণাধীন ৯টি র‌্যাম্প চালু হলে যান চলাচল আরও বাড়বে। তখন এটির কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে।”

তিনি আরও বলেন, “মানুষের এখনো টোল দিয়ে সড়ক ব্যবহারের প্রবণতাও কম। তাই অনেকে জ্বালানি খরচ করে দীর্ঘ সড়ক পথ ব্যবহার করে যাতায়াত করছে। সমীক্ষায় অন্তত ১৫ প্রকারের যান থাকলেও এখন চলছে ১০ প্রকারের। ফলে ৪০ শতাংশ গাড়ি এমনিতেই কমে গেছে। আশা করছি, আগামীতে যান চলাচল বাড়বে।”

চুয়েটের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে ২০২৫ সালে সেখানে প্রতিদিন প্রায় ৮১ হাজার ৪৭১টি গাড়ি চলাচল করার কথা। এর মধ্যে রিকশা ১৪ হাজার ৩৫৮টি, মোটরসাইকেল ৫ হাজার ৮১৪টি, ঠেলাগাড়ি ৫৯০টি, কার ও তিন চাকার যানবাহন ৩৯ হাজার ৪২৮টি, মাইক্রোবাস, ভ্যান, জিপ ৬ হাজার ৫১৩টি, মিনিবাস ও পিকআপ ৫ হাজার ৩৮টি, বাস ৩ হাজার ৩৮৯টি, ট্রাক ৫ হাজার ৬৬৪টি এবং লরি ও ট্রেলার ৬৭৭টি। কিন্তু সরকার এই সমীক্ষাকে পাত্তা দেয়নি। ফলে বর্তমানে এক্সপ্রেসওয়েতে শুধু ১০ ধরনের যানবাহন চলাচল করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া বাস, টেম্পোর মতো গণপরিবহন ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়েতে টানা চলাচল করা কঠিন। ফলে এত টাকা ব্যয় করে তৈরি করা এই অবকাঠামোয় অপচয়ই বেশি হয়েছে।

এই বিভাগের আরও পড়ুন