চট্টগ্রামের বাঁশখালী-আনোয়ারা উপকূলে ৮৭৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ১২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্পের কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রাখা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রকল্পটির বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকলেও, অনিয়ম ও দুর্নীতির আশঙ্কায় নৌবাহিনীকে দিয়ে কাজটি করানোর দাবি উঠেছে। নৌবাহিনীও প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, কে করবে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
পাউবো সূত্র জানিয়েছে, বিগত সরকারের আমলে নেওয়া এই প্রকল্পের ২০ কোটি টাকার দুটি লটের জন্য গত ডিসেম্বরে ‘আরএফএল’ নামক একটি কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, নৌবাহিনী প্রকল্প বাস্তবায়নের আগ্রহ প্রকাশ করায় সব কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।
পাউবোর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা তানজির সাইফ আহমেদ জানান, “সরকার যাদের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাইবে সেভাবেই হবে। এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত নেই।”
তবে, স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ১৫ বছরে পাউবো আনোয়ারা ও বাঁশখালীতে শত শত কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও কাজের মান ছিল নিম্নমানের। দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে প্রকল্পের সুফল মেলেনি। তাই, স্থানীয় জনগণ নৌবাহিনীর মাধ্যমেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন চান।
জানা গেছে, ২৩ লটে ভাগ করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় পাউবো। প্রকল্প পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় পাউবো চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জুলফিকার তারেককে। প্রাথমিকভাবে ২০ কোটি টাকা মূল্যের দুটি লটের কার্যাদেশ পায় ‘আরএফএল’। অভিযোগ উঠেছে, বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের এমপির সুপারিশে ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়।
কিন্তু, সরকারের পটপরিবর্তনের পর প্রকল্পে অনিয়মের শঙ্কা থেকে পাউবোর পরিবর্তে নৌবাহিনীকে দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি ওঠে। নৌবাহিনীও আগ্রহ প্রকাশ করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে লিখিত প্রস্তাব দেয়। এই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রকল্পের সব কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশনা প্রদান করে।
বিভিন্ন সূত্র অভিযোগ করেছে, নৌবাহিনীর আগ্রহ প্রকাশের পর পাউবোর কর্মকর্তারা ‘নাখোশ’ হন। স্থানীয়দের ধারণা, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাঁধ নির্মাণ হলে কাজের মান ভালো হবে, লুটপাটের সুযোগ বন্ধ হবে।
পাউবো বলছে, তাদের মাঠপর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা আছে। কিন্তু, স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। তাদের মতে, পাউবোর বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো টেকসই হয় না, দুর্নীতির কারণে প্রকল্পের টাকা লোপাট হয়।
এই অবস্থায়, বাঁশখালী-আনোয়ারা উপকূল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নির্ভর করছে সরকারের সিদ্ধান্তের উপর। প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে, অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।