বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় অবস্থিত নবনির্মিত জাতিসংঘ পার্ক ঘিরে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। পার্কটিতে কেবলমাত্র আবাসিকদের প্রবেশাধিকার সংরক্ষণের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতি। তবে তাদের এ দাবি নাকচ করে দিয়েছেন নগরবাসী এবং নগর পরিকল্পনাবিদরা।
সম্প্রতি ১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তর পার্কটি নতুন করে নির্মাণ করেছে। উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা পার্কটিতে কেবল আবাসিকদের প্রবেশাধিকারের দাবিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতি।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু সাঈদ সেলিম বলেন, “পার্কটি দেখেই এখানে প্লট নিয়েছেন সবাই। তাই এটি শুধু আবাসিকদের জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত। বাইরের লোকজন আসলে নিরাপত্তা বিঘ্নের আশঙ্কা রয়েছে। নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে একটি পার্ক আছে যেটি কেবল সোসাইটির বাসিন্দারাই ব্যবহার করেন।”
তিনি আরও বলেন, “পার্কে একটি দোকান নির্মাণ করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। আমরা এর বিরোধিতা করছি। পার্কটি ঘিরে কোনো ধরনের বাণিজ্যিকীকরণ যেন না হয়।”
তবে নগর পরিকল্পনাবিদ আশিক ইমরান বলেন, “চট্টগ্রামে পার্কের সংখ্যা খুবই কম। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় নির্মিত এই পার্ক সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পার্কের সময়সূচী নির্ধারণ করে দেওয়া যেতে পারে।”
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, “জনগণের টাকায় নির্মিত পার্কটি জনগণ ব্যবহার করতে না পারলে তা হবে গণবিরোধী সিদ্ধান্ত।” তিনি আরও বলেন, “পার্কটির নিয়ন্ত্রণ গণপূর্ত মন্ত্রণালয় অথবা সিটি কর্পোরেশনের হাতে থাকা উচিত। আবাসিক সমিতির হাতে ন্যস্ত করা যাবে না।”
মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা পারভেজ বলেন, “আমি পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা নই। তবুও পূর্বে আমরা এ পার্কে ঘুরতে যেতাম। কেবল আবাসিক এলাকার লোকজনের জন্য পার্কের সুযোগ সীমাবদ্ধ রাখা অন্যায়।”
এদিকে, গণপূর্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের (সার্কেল-১) নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান খান জানান, পার্কটির উদ্বোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এ মাসেই পার্কটি উদ্বোধন করা হবে।
পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির দাবীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ বিষয়টি জটিল। নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির পার্কটি আবাসিক এলাকার নিজস্ব অর্থে নির্মিত। কিন্তু জাতিসংঘ পার্ক আবাসিক এলাকার অর্থে নির্মাণ করা হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “আবাসিক সমিতি একটি চিঠি দিয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় কী সিদ্ধান্ত দেয় দেখা যাক।”
উল্লেখ্য, দুই দশমিক ২৭ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত পার্কটি ২০০২ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ‘জাতিসংঘ পার্ক’ নামকরণ করা হয়। দীর্ঘদিন অযত্ন-অবহেলায় পরিত্যক্ত থাকার পর সম্প্রতি এটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন করে নির্মিত পার্কে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সীমানা প্রাচীর ও প্রবেশপথ, হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে, বসার সিট, শিশুদের জন্য খেলাধুলার সরঞ্জাম, শরীরচর্চার সরঞ্জাম, টয়লেট ব্লক ইত্যাদি।