চট্টগ্রাম নগরের রাস্তাঘাট সংস্কার ও উন্নয়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের আয়ের ১ শতাংশ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক) প্রদানের দাবিতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিচ্ছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
দীর্ঘদিন ধরেই চট্টগ্রাম বন্দরের আয়ের একটি অংশ চসিককে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে নগর কর্তৃপক্ষ। এমনকি ‘বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন’–এর খসড়ায় বন্দরের আয়ের ১ শতাংশ অর্থ চসিককে দেয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হলেও চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় তা বাদ দেয়া হয়।
এ অবস্থায় বন্দরের বাৎসরিক আয় থেকে ১ শতাংশ হারে সার্ভিস সার্জ হিসেবে দাবি করে নৌ–পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বরাবর আজ চিঠি পাঠাচ্ছেন মেয়র।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রামের অধিকাংশ রাস্তা ৬–১০ টন ওজনের গাড়ির জন্য নির্মাণ করা হলেও বন্দরের ৫০–৬০ টনের বোঝা নিয়ে গাড়ি চলাচল করায় রাস্তাঘাট দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও বন্দরের পণ্যবাহী যানবাহনের কারণে নিয়মিত রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট নষ্ট হচ্ছে, যা নগরবাসীর জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এসব রাস্তাঘাট নিয়মিত সংস্কার করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন যা চসিকের বর্তমান সক্ষমতা দিয়ে যোগান দেওয়া কঠিন।
মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “আমাদের যে ন্যায্য হিস্যা সেটা বন্দর অবশ্যই দেবে বলে মনে করি। বন্দরের বড় বড় গাড়িগুলো আমাদের রাস্তা দিয়ে চলছে। আমরা তাদের আমাদের সমস্ত লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছি। বন্দরের ভারী গাড়িতে আমাদের সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
তিনি আরও বলেন, “বন্দর যদি আয়ের ১ শতাংশ চসিককে দেয় তাহলে চসিক অবকাঠামো খাতে আরো ভূমিকা রাখতে পারবে।”
এর আগেও বন্দরের আয়ের একটি অংশ চসিককে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর এ বিষয়ে একটি আলোচনা সভায় চসিকের প্রস্তাবনা ছিল, ‘স্বায়ত্বশাসিত, আধা–স্বায়ত্বশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন–ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব–শাসিত সংস্থাসমূহের তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন, ২০২০ এর ৫নং ধারার আংশিক সংশোধন করে বন্দরের আয়ের উদ্বৃত্ত টাকা চসিকের অনুকূলে যেন বরাদ্দ দেয়া হয়।’
২০২১ সালের ৫ এপ্রিল ‘চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন ২০২১’ এর চূড়ান্ত খসড়া মন্ত্রিপরিষদের সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। ওই খসড়ায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ শতাংশ অর্থ চসিককে প্রদানের বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত ছিল।
কিন্তু ২০২২ সালের এপ্রিলে ওই খসড়া ‘চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন–২০২২’ হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। এতে চসিককে ১ শতাংশ অর্থ দেয়ার বিষয়টি বাদ পড়ে।
অর্থনীতিবিদ ও ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির ভিসি মু. সিকান্দর খান বলেন, “একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বন্দরের মত আর কেউ চট্টগ্রাম শহর ব্যবহার করছে না। চট্টগ্রাম শহর বলতে শহরের যে পরিষেবাগুলো আছে, বিশেষ করে রাস্তাঘাট। কাজেই এই শহরের রক্ষণাবেক্ষণে বন্দরের একটা অংশীদারিত্ব থাকা ভাল।”
তিনি আরও বলেন, “বন্দরের ভারী যানবাহনগুলো শহরের রাস্তাঘাটের উপর দিয়ে যাচ্ছে। সেই রাস্তাঘাট রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপালনকারী সিটি কর্পোরেশনকে কিছু অর্থ বন্দরের অবশ্যই দেয়া উচিত।”