চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাসপাতালের চতুর্থ তলায় পুরনো আইসিইউ ইউনিটে আরও ১০টি শয্যা সংযুক্ত করা হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে গত মাস থেকে ওই ইউনিটে স্থাপিত ২০ শয্যায় রোগী ভর্তি বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে হাসপাতালের নিচ তলায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় নির্মিত ৩০ শয্যার আইসিইউ ইউনিটই একমাত্র ভরসা। হাসপাতালে রোগীর চাপের তুলনায় আইসিইউ শয্যা খুবই কম। ফলে হাসপাতালে ভর্তি অনেক রোগীর আইসিইউ চাহিদা থাকলেও চিকিৎসকদের করার কিছুই থাকে না।
চতুর্থ তলায় নতুন ১০ শয্যাসহ মোট ৩০ শয্যার আইসিইউ চালু হলে সংকট কিছুটা ঘুচবে এবং সক্ষমতাও বাড়বে বলে আশা করছেন চিকিৎসকরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্তিম মুহূর্তে মৃত্যুপথযাত্রী রোগীদের শেষ ভরসাস্থল আইসিইউ শয্যা। যেখানে অত্যাধুনিক শ্বাস–প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মাধ্যমে মুমূর্ষ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম নগরীতে সরকারি পর্যায়ে রোগীর তুলনায় আইসিইউ শয্যার সংখ্যা একেবারে অপ্রতুল। বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা ব্যয় বেশি বলে গরীব ও সাধারণ রোগীরা সেখানে চিকিৎসা নিতে পারেন না। ফলে শেষ মুহূর্তে স্বজনদের চোখের সামনে অনেক রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
চমেক হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক জানান, সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউ সাপোর্ট দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু আইসিইউ শয্যার সংকটের কারণে ওইসব রোগীকে সঠিক সময়ে অস্ত্রোপচারও করা সম্ভব হয় না।
দুর্র্ঘটনা রোগী ছাড়াও নিউরোসার্জারি, গাইনোকোলোজি, কার্ডিওলজি, কার্ডিয়াক সার্জারি, নেফ্রোলজি, মেডিসিন বিভাগ থেকে অনেক জটিল রোগীকে আইসিইউতে রেফার করেন চিকিৎসক। আইসিইউ শয্যা বৃদ্ধি হওয়ায় সংকট কিছুটা হলেও ঘুচবে।
চিকিৎসকরা শুধু রোগীর স্বজনদের আইসিইউর প্রয়োজনের কথা জানিয়ে দেন। চমেক হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নেন, তাদের বেশিরভাগই দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। এদের পক্ষে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয় না।
ফটিকছড়ি থেকে আসা আবুল হোসেন নামে এক রোগীর আত্মীয় বলেন, “আমার চাচাকে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করেছি দুইদিন আগে। আজকে সকালে ডাক্তার বলেছেন, উনার শ্বাসকষ্ট বেড়েছে, জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউ লাগবে। কিন্তু সকাল থেকে দৌড়াদৌড়ি করছি, আইসিইউ পাচ্ছি না।”
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন জানান, হাসপাতালের চতুর্থ তলায় পুরনো আইসিইউ ইউনিটটি ২০ শয্যার। এটি আরও ১০ শয্যা বৃদ্ধি করে ৩০ শয্যায় উন্নীত করা হচ্ছে।
শয্যা স্থাপনের অবকাঠামোগত কাজ প্রায় শেষের দিকে। আর দুই সপ্তাহ মতো সময় লাগতে পারে। নির্মাণ কাজ শেষে হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের সক্ষমতা আরও বাড়বে। কারণ তখন হাসপাতালের মোট আইসিইউ শয্যা হবে ৬০টি।
এছাড়া ইতোমধ্যে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে ১০ শয্যার ডেডিকেটেড আইসিইউ চালু হয়েছে। গাইনি ওয়ার্ডে ১০ শয্যার এবং শিশু ওয়ার্ডে আরও ১০ শয্যার ডেডিকেটেড আইসিইউ শয্যার বাড়ানোর কাজ চলমান রয়েছে।