রফতানি ও রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষয় অব্যাহত রয়েছে। গত আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চার মাসে রফতানি আয় ৮ শতাংশ এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও এ সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট রিজার্ভ কমেছে ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৮ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল ২০.৪৮ বিলিয়ন ডলার। ৫ ডিসেম্বর তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৮.৮৪ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ চার মাসের ব্যবধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ কমেছে ১.৬৪ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর রিজার্ভ কমেছে ১.৪৮ বিলিয়ন ডলার।
সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, রিজার্ভে হাত না দিয়েই প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দায় পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জ্বালানি, আদানির বিদ্যুৎ বিল, সার ও খাদ্য আমদানির দায়।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার রিজার্ভে হাত না দেয়ার কথা বললেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বিশ্লেষণ করলে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে।
এদিকে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে দেশে ৯.২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এটি ৩৪.৭৯ শতাংশ বেশি। একইভাবে, রফতানি খাতেও ৮.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, “রফতানি ও রেমিট্যান্স বাড়লেও বিদেশী উন্নয়ন সহায়তার গতি কমে আসায় রিজার্ভে টান পড়ছে।” তিনি আরও বলেন, “উন্নয়ন সহায়তার পাশাপাশি বাজেট সহায়তাও এখনো পাওয়া যায়নি।”
ইআরডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ১২০ কোটি ২০ লাখ ডলারের বিদেশী ঋণের অর্থ ছাড় হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ কম। অথচ, এ সময়ে ১৪৩ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের বিদেশী ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০.৫৪ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, “রেমিট্যান্সের ডলার রিজার্ভে যুক্ত হতে সময় লাগে। রফতানি আয় থেকেও ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব ডলারের চাহিদা মেটায়।” রিজার্ভ কমার বিষয়ে তিনি বলেন, “মূলত আকুর মাধ্যমে দেড় বিলিয়ন ডলারের একটি বড় দায় পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভ কিছুটা কমে গেছে।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ডিসেম্বরের পর রিজার্ভ আরো বাড়বে।