বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ-বাণিজ্যবাপেক্সকে উপেক্ষা, এলএনজি আমদানিতে জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে

বাপেক্সকে উপেক্ষা, এলএনজি আমদানিতে জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি হিসেবে ১৯৮৯ সালে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। অর্ধশতাধিক কূপ খনন করেছে কোম্পানিটি। ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত গ্যাস অনুসন্ধানে খননকৃত প্রতিটি কূপেই শতভাগ সাফল্য পেয়েছে বাপেক্স। এর পরও গ্যাস অনুসন্ধানে বাপেক্সকে উপেক্ষা করে বিদেশী কোম্পানি ও এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়িয়েছে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে একদিকে কোম্পানিটির কর্মদক্ষতা, সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, অন্যদিকে বিদেশী কোম্পানিনির্ভরতা ও এলএনজি আমদানি বাড়াতে গিয়ে চাপে পড়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকিতে পড়েছে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন বাপেক্সকে সংস্থাটির নিজস্ব সক্ষমতা ব্যবহার করতে না দেয়ার পেছনে বিগত সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-আমলাদের এলএনজি আমদানিতে কমিশন বাণিজ্য বড় অংশে দায়ী। অপ্রতুল অর্থ বরাদ্দ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও পর্যাপ্ত আর্থিক সুযোগ-সুবিধা না থাকায় কোম্পানিটির দক্ষ ও যোগ্য লোকবল স্থানান্তরিত হয়েছে বিদেশী কোম্পানিতে।

২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মোট ১৭টি কূপ খনন করেছে বাপেক্স। প্রতিটিতেই গ্যাস আবিষ্কার হয়েছে। তিতাস, কৈলাসটিলা ও শাহবাজপুরের মতো গ্যাস ক্ষেত্রে কূপ খনন করে গ্যাস পেয়েছে বাপেক্স।

২০১৪ সাল থেকে দেশের স্থলভাগে কূপ খননে বাপেক্সের পাশাপাশি কাজ দেয়া হয় রুশ তেল-গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রমকে। কোম্পানিটি সাতটি কূপ খনন করে। অভিযোগ রয়েছে, বাপেক্সের সক্ষমতা নেই এমন অভিযোগ থেকেই তাদের আবিষ্কৃত গ্যাস ক্ষেত্রে রুশ কোম্পানিটিকে কাজ দেয়া হয়েছিল।

পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ছয় বছরে দেশে ৪১০টি কার্গোয় মোট ১ হাজার ২৪৪ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে মোট ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের পরও দেশের জ্বালানি খাত এখন তীব্র গ্যাস সংকটে ভুগছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অনারারি প্রফেসর অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, ‘কূপ খননে বাপেক্সের অতীত সফলতা আমরা সবাই দেখেছি। বিগত সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির কর্মদক্ষতাকে মূল্যায়ন করতে পারেনি।’

বাপেক্সের সাবেক এমডি মর্তুজা আহমেদ বলেন, ‘অতীতে বাপেক্সের সাফল্য ও গ্যাস কূপ খননে শতভাগ সফলতার হারকে অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু এটা সত্য যে বাপেক্সের অতীত সফলতাকে বড় আকারে কাজে লাগানোর সুযোগ ছিল, সেটি করা যায়নি।’

বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শোয়েব বলেন, ‘বাপেক্স বর্তমানে নিজস্ব সচল সব রিগ ব্যবহার করে কূপ খনন কার্যক্রম চালাচ্ছে। স্থলভাগে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করবে।’

এই বিভাগের আরও পড়ুন